বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ নয়

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের যে জনসমর্থন, সে বিবেচনায় আরও বেশি ভোট আশা করেছিলাম। আওয়ামী লীগের যে পার্সেন্টেজ, সেই তুলনায় তো উপস্থিতি আশানুরূপ নয়। তবে এই নির্বাচনে পরাজিত বিএনপির প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছেন, তা খারাপ নয়।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল  বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে সরাসরি সচিবালয়ে উপস্থিত হয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি যে অবস্থায় নির্বাচন করেছে, তাদের পার্টির মূল নেতৃত্বই নেই। আমার মনে হয় তারা ভালো করেছে।’ ভোট কম পড়া নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল্যায়ন করার জন্য আমরা ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করব। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলে এই মিটিং হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বীক্ষণ-পরিবীক্ষণ, আমাদের অবজারভেশন, পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। এ রকমই চিন্তাভাবনা রয়েছে। পরশুদিন ফোনে যখন কথা হয়, তখন নেত্রীও আমাকে বলেছিলেন ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করা জরুরি।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি মনে করি, এখানে আমাদের গভীরভাবে ভাবনার বিষয় আছে। আমাদের ভোটের যে পার্সেন্টেজ, সেই পার্সেন্টেজ অনুযায়ী যে ভোট পড়ার কথা ছিল, সেটা তো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ভোট কম পড়ার পেছনে কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করেছি। নিজেদের ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতার’’ পাশাপাশি দু-তিন দিন ছুটি থাকায় অনেকের গ্রামের বাড়ি যাওয়া এবং পরিবহন সংকট ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিটিগুলো হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ঢাকা সিটিতে ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো দরকার।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, অনতিবিলম্বে ঢাকা সিটির ওয়ার্ড, থানার সম্মেলনগুলো করা দরকার। এখানে বড় না হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এটা হলো বাস্তবতা। বাস্তবতা অস্বীকার করে তো লাভ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একটা বিষয় হচ্ছে, এই যে ভোটটা হচ্ছে, আগেভাগেই শঙ্কা তৈরি করা যে এই সিস্টেম খারাপ, এই সিস্টেমে ভোট দেওয়া যাবে না। এ রকম অবস্থায় কিছু মানুষের আগ্রহ তো কমতেই পারে। কারণ ভোট সম্পর্কে অপপ্রচারটা অনেক বেশি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির যে পারফরম্যান্স, এই ভোটের মধ্যেও তাদের ভোটসংখ্যা একেবারে কম নয়। অনেক ভোট পেয়েছে তারা। সেই দিক থেকে বিরোধী দল হিসেবে তারা ভোটে একেবারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এমন নয়। তাদের প্রার্থীরা ভালো ভোট পেয়েছেন। এটা গণতন্ত্রের জন্যই ভালো।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারি দলের ভয়ংকর প্রস্তুতি, বিরোধী দলও সতর্ক পাহারায় থাকবে, তারা ঢাকার বাইরে থেকে লোক জড়ো করেছে- এ ধরনের ইনফরমেশন তো ছিলই। আমার মনে হয়, সবকিছু মিলিয়ে একটা ভালো ইলেকশন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো জনমত সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেশি হওয়া উচিত। ভোটের রাজনীতির প্রতি মানুষের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএমে এত বড় এলাকায় নির্বাচন নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে ইভিএমের ব্যবহার হয়েছে। নতুন অভিজ্ঞতায় প্রায়োগিক বাস্তবতায় কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে যারা ভোট দিয়েছেন, অনেকেরই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে খুব সহজে ভোট দিতে পেরেছেন। এত বড় এলাকায় দু-একটি জায়গায় হয়তো ভুলত্রুটি হয়েছে। সবকিছুর পরও একটা ‘‘ভালো নির্বাচন’’ হয়েছে।’ তিনি বলেন, বর্তমানের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতের ইলেকশনে এড়ানো যাবে। নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের হাতে সাংবাদিক প্রহৃত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা হওয়া উচিত ছিল না। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন মোটামুটি ভালো হয়েছে। শান্তিপূর্ণই বলা চলে। বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি। বিএনপি তো বলবেই। আমি বিএনপির ব্যাপারটি বলছি, তাদের দল যতটা এলোমেলো এবং নেতৃত্বহীন- এ অবস্থায় তারা অনেক ভালো করেছে। যতটুকু রেজাল্ট, আমি মনে করি বিএনপি ভালো রেজাল্ট করেছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। পরদিন সিসিইউ থেকে ক্যাবিনে স্থানান্তর করা হয় তাকে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর