সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম-সবাই তারকা ক্রিকেটার। সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন। বিশ্বজোড়া নাম সবার। কিন্তু তারা কেউই বিশ্বজয়ী নন। এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে এরা কেউই বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারেননি।
অথচ আকবর আলী, মাহামুদুল হাসান জয়, শরীফুল ইসলাম, রাকিবুল হাসানদের বয়স ১৯-এর ঘরে। সবাই তরুণ তুর্কি। অথচ সবাই এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। হাজার হাজার মাইল দূরে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় আকবররা লাল-সবুজ পতাকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার নতুন ইতিহাস লিখেছেন। উৎসব, উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছেন ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে। যুব ক্রিকেটারদের স্বপ্নের এই পারফরম্যান্সে উদ্ভাসিত আনন্দে ভাসছে গোটা দেশ। অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি হবে, সে নিয়ে বিসিবি সভাপতি বসেছিলেন পরিচালকদের নিয়ে। সভা শেষে সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এটা সেরা অর্জন এবং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও ক্রিকেটারদের এখনই সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে সাফল্য পেতে আরও কষ্ট করতে হবে। আকরামের নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতার পর পাল্টে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। এরপর থেকে তরতরিয়ে শুধু উপরেই উঠেছে গ্রাফ। টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল, এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে। কিন্তু শিরোপার স্বাদ পায়নি। যুবারাও ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল খেলেছে। এবার ফাইনাল খেলে প্রতিবেশী ভারতকে হারিয়ে লিখে ফেলে লাল-সবুজ পতাকার ইতিহাস। আকবররা যে দুরন্ত ক্রিকেট খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তার পেছনে কঠোর পরিশ্রমকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আকরাম, ‘এই দলটি গত দুই বছর ধরেই পরিশ্রম করছে। তার ফলও পেয়েছে। আমি মনে করি দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সবার পারফরম্যান্সে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটাই সেরা অর্জন। সত্যি বলতে কি, ৬/৭ বছর আগে থেকেই ভাবছিলাম আমরা যুব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হব।’ পচেফস্ট্রোমের হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিং পাঠিয়ে ১৭৭ রানে বেঁধে ফেলে। এরপর ইমন ও আকবরের হিমালয়সম দৃঢ়তার ব্যাটিংয়ে ২৩ বল হাতে রেখেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। আকবরের ধৈর্যশীল ব্যাটিংকে অসাধারণ বলতে কার্পণ্য করেননি সাবেক অধিনায়ক আকরাম, ‘দলকে আগলে রেখে ঠান্ডা মাথায় যেভাবে ব্যাটিং করেছে আকবর, এক কথায় অসাধারণ। ইমনকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। মাসল পুল নিয়েও যেভাবে ব্যাটিং করেছে সে, অবিশ্বাস্য। শুধু এরাই নয়, দলের সবাই অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন।’ যুবারা বিশ্বজয় করলেও এখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নিষেধ করেছেন। জানিয়েছেন, এখনই সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অনেক বড় অর্জন। তাই বলে এটা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকা যাবে না। ভবিষ্যতে এগোতে হলে এখানেই থেমে থাকা যাবে না তাদের। সাফল্য পেতে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ বিশ্বকাপের শুরুতে ফেবারিট ছিল না বাংলাদেশ। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে যুবারা। দুর্দমনীয় ক্রিকেট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল।