মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছিল অশান্তির চেয়ে ভয়াবহ : সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছিল অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ- সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ছিল দুর্বল। নানা অনিয়ম হলেও বিএনপিকে প্রতিবাদী হতে দেখা যায়নি। ভয়ের সংস্কৃতি ও প্রতিপক্ষের চরম দুর্বলতার কারণে ঢাকার দুই সিটির ভোট আপাতদৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে আমরা মনে করি, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। এ সময় সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফেরাতে ভোটে হওয়া সব অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন। গতকাল রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও নির্বাচন মূল্যায়ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। সুজন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান। লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন সুজনের কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমদ, নির্বাহী সদস্য ড. শাহনাজ হুদা এবং অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা জানতে চেয়ে সুজন ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন জরিপ করা হয়। এতে ৪ হাজার ৩০০ জন অংশ নেন। যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাদের ৯৪ শতাংশই বলেছেন যে, নির্বাচনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। যদিও অনলাইন ভোট  বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়, এটি জনসাধারণের ধারণার অনেকটা ইঙ্গিত বহন করে। তবে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিতির চিত্র ও  ভোট পড়ার হারের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই বলে মনে করে সুজন। লিখিত প্রতিবেদনে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়, তবে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার পরও যদি  সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়, তবে বুঝতে হবে প্রতিপক্ষ এখানে চরম দুর্বল। সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার কারণ হিসেবে সুজন বলছে, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের আস্থা না থাকাই হলো প্রধান কারণ। এ ছাড়া দলগুলোর পাল্টাপাল্টি হুমকি ভোটাররা  কেন্দ্রবিমুখ হয়ে পড়ে, পাড়া-মহল্লা ও ভোট কেন্দ্র পাহারা এবং  ভোট কেন্দ্রের বাইরে সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থকদের জটলা ও মহড়া, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রচার হওয়া,  ভোট কেন্দ্রে না গেলেও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক প্রার্থীরা জয়ী হবে এমন ধারণায় বদ্ধমূল থাকা, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ও আত্মবিশ্বাসহীনতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ এনে বলেন, এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও ইভিএমের এক অগ্নিপরীক্ষা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই অগ্নিপরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তারা ব্যর্থ হয়েছেন। একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার। যার মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।

সর্বশেষ খবর