শুক্রবার, ১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

এবারের রমজান যাপন করবেন যেভাবে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

এবারের রমজান যাপন করবেন যেভাবে

এক মাস আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। প্রতিটি মানুষ ব্যস্ততার সমুদ্রে ডুবে ছিল। প্রযুক্তির কল্যাণে একেক মিনিটে কোটি টাকাও ইনকাম করা যেত। করপোরেট মানুষগুলো সময়কে মেপেছে টাকার পাল্লায়। সময়কে তারা টাকার বিপরীত শব্দ বানিয়ে নিয়েছে। এদের যখন আখিরাতের কথা বলা হতো, যখন বলা হতো বাবা-মা, আত্মীয়-প্রিয়জনদের খোঁজখবর নাও, তখন তারা বলত, এখন আমাদের সময় নেই। অথচ এ মানুষগুলো যেভাবে টাকার পেছনে ছুটত, সেভাবে না ছুটলেও পারত। কিছুটা বিশ্রাম নিলে, প্রভুর স্মরণে কিছু সময় কাটিয়ে দিলে, আত্মীয়তার কোলাহলে কয়েকটা দিন মিশে গেলে এদের তেমন ক্ষতি হতো না। আফসোস! ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে তারা আমলে সালেহ বা সৎকাজ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে। আজ করোনা নামক মহামারী দিয়ে আল্লাহতায়ালা সব ব্যস্ততাকে থামিয়ে দিয়েছেন। যারা মিনিটে মিনিটে উপার্জনের নেশায় মত্ত থাকত, আজ তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অবসর যাপন করছে। আমরা কেউই জানি না, এ পৃথিবী আবার কবে কর্মকোলাহলে ভরে উঠবে। কবে আবার পৃথিবীতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। এটাই আল্লাহতায়ালার খেলা। এটাই আল্লাহর কারিশমা। তিনি মানুষকে বোঝাতে চাচ্ছেন, আমার দেওয়া সময় তোমরা আমার পথে খরচ না করে আমাকেই ব্যস্ততার অজুহাত দেখাও, ঠিক আছে তোমরা কত বেশি ব্যস্ত থাকতে পার দেখা যাবে। দারুণ অবসরের মধ্যে আমাদের মাঝে রমজান এসেছে। আমরা এবার যে অসবর পেয়েছি, অন্তত আশা করি এবারের রমজানের পূর্ণ ফায়দা আমরা অর্জন করতে পারব। যেহেতু সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে, তাই নিশ্চিন্তে একটি মাস খোদার দরবারে পড়ে থেকে কান্নাকাটি করার অপূর্ব সুযোগ যেন কারও হাতছাড়া না হয়। সবচেয়ে ভালো হয় পুরো রমজানই যদি ইতিকাফের নিয়তে কাটানো যায়। এ অবসরে এটি আমাদের জন্য মোটেও কষ্টকর হবে না। সবচেয়ে অবাক এবং দুঃখজনক কথা হলো- ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ কয়েকজনের কাছে রমজানের প্রস্তুতির কথা জানতে চেয়েছিলাম। তারা বললেন, পরিস্থিতি ভালো হলে জম্পেশ মার্কেট করব। অনেক কেনাকাটা করব। একটা দারুণ ঈদ কাটাব। আমাদের মতো হতভাগা জাতি সব সময় এমন প্রস্তুতিই নিয়ে আসছি রমজানের জন্য। কিন্তু এবার যখন করোনা নামক গজবের চাদরে পুরো পৃথিবী ঢাকা, তখনো আমাদের হুঁশ হলো না। তখনো আমরা ইবাদত-বন্দেগিতে রমজান যাপন করব এমন পরিকল্পনা নিতে পারলাম না। এর চেয়ে বড় আফসোসের কথা আর কী হতে পারে। এবারের রমজানের অবসর সময়টুকুর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু পুরো সময়টা বাসায় থাকা হবে তাই সময়কে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। দিনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় কোরআনের পেছনে ব্যয় করতে হবে। আমাদের দেশে কোরআন বোঝার প্রবণতা কম। সবাই কোরআন খতম করতে ব্যস্ত থাকে। কোরআন বোঝার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। কিন্তু আল্লাহতায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন কোরআন বুঝে মানুষ যেন সে অনুযায়ী আমল করতে পারে এজন্য। তাই এবারের রমজানে আমরা একটা টার্গেট নিতে পারি যে, পুরো কোরআন একবার অর্থসহ পড়ে শেষ করব। আশা করা যায় এতে করে আমাদের জীবন আলোকিত হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ব্যস্ততা আসার আগে অবসরকে গনিমত মনে করো। এই স্থবির অবস্থা শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবী আবার তার চেনা চেহারায় ফিরে আসবে। এর আগে আল্লাহপাক আমাদের যে অবসরটুকু দিয়েছেন, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। অনলাইনে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। শুয়ে বসে সময় যাপন না করে পড়াশোনা-ইবাদত-বন্দেগিতে সময় যাপন করতে হবে। ঘরের কাজে নারীদের সাহযোগিতা করা যেতে পারে। হে আল্লাহ! আমাদের আপনি একটি চমৎকার রমজান কাটানোর   তৌফিক দান করুন। রমজানের অসিলায় আপনি আমাদের থেকে করোনা নামক মহামারী হটিয়ে দিন। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর