বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

লেবাননে আতঙ্কিত বাংলাদেশিরা

চার বাংলাদেশি নিহত, আহত ৮০

শিমুল মাহমুদ

লেবাননে স্মরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণে দুজন বাংলাদেশি শ্রমিকসহ শতাধিক মানুষের মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আতঙ্ক কাটেনি। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন বাংলাদেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্য রয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন নৌবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুন উর রশীদ। মারা যাওয়া চারজন ছিলেন বাংলাদেশি বেসামরিক কর্মী। তাদের একজন রেস্টুরেন্ট শ্রমিক শরীয়তপুরের মিজান (৩৮)। একজন স্থানীয় একটি সুপারমার্কেটের কর্মী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদী হাসান (২৮)। বাকি দুজন পেট্রলপাম্পের শ্রমিক। তারা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার রাশেল (২২) ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের রেজাউল (২৫)। তারা কেন ওই সন্ধ্যায় বৈরুত বন্দর এলাকায় ছিলেন তা জানার চেষ্টা করছে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের দেশ লেবাননে সর্বাধিক প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশির বাকিরা সবাই ভালো আছেন। ২০০৬ সালের ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধের পর এত বড় বিস্ফোরণের ঘটনা তারা আর প্রত্যক্ষ করেননি।  

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) লেবাননের রাজধানীসংলগ্ন বৈরুত বন্দর এলাকায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সরকারি বিস্ফোরক গুদাম থেকে সংঘটিত এই বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে পার্শ্ববর্তী দেশ সাইপ্রাস থেকেও আগুনের হলকা ও কালো ধোঁয়া দেখা যায়। বৈরুত থেকে সাইপ্রাসের দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। বিমান পথে মাত্র ২৬ মিনিটের পথ। গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে কথা হয় সাইপ্রাসে বাংলাদেশি মানি এক্সচেঞ্জ এবং খাদ্য ব্যবসায়ী জি এম মুকুলের সঙ্গে। সাইপ্রাসের বাংলাদেশ কমিউনিটির সভাপতি জি এম মুকুল বলেন, এত দূর থেকেও আমরা কালো ধোঁয়া ও আগুনের কুন্ডলি দেখেছি। লেবাননে আমাদের অনেক বাংলাদেশি ভাই-বোন আছেন। তাদের নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। 

লেবাননের বাংলাদেশি সাংবাদিক বাবু সাহা গতকাল টেলিফোনে বলেন, লেবাননে বাংলাদেশিরা এখন ভালো আছেন। তবে এত ভয়াবহ বিস্ফোরণ আগে কখনো  দেখেনি লেবাননবাসী। বৈরুত শহরের শত শত বাড়ি ধসে  গেছে। অধিকাংশ বাড়ির দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে। পুরো বন্দর এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বন্দরে নোঙর করা বেশকিছু জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি জাহাজ বিএনএস বিজয় রয়েছে। বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অব চ্যান্সেরি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, এখন পর্যন্ত চারজন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত হতে পেরেছি আমরা। বৈরুতের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি জানান, মারা যাওয়া চারজন বাদে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন বাংলাদেশি বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেবাননে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে আরও কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, তা জানতে অনুসন্ধান চলছে বলে জানান আবদুল্লাহ আল মামুন। লেবাননে দীর্ঘদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলতাফ হোসেন। তিনি গতকাল টেলিফোনে বলেন, এত ভয় পেয়েছিলাম, মনে হয়েছিল ইসরায়েল বুঝি আক্রমণ করেছে। আর বুঝি জীবন নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারব না। এখন সেই আতঙ্ক কেটে গেছে। বিস্ফোরণের মূল কেন্দ্র বৈরুত বন্দর এলাকায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। অপারেশনাল কার্যক্রমের বিরতিতে বিএনএস বিজয় ১১০ জন নৌসেনাসহ বৈরুত বন্দরে অবস্থান করছিল। বিস্ফোরণের সময় অধিকাংশ নৌসেনা জাহাজেই ছিলেন। নোঙর করা জাহাজের ওপর বিস্ফোরক এসে পড়ায় জাহাজটিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই জাহাজটি চলতি মাসেই দেশে ফিরে আসার কথা ছিল। চীন থেকে নতুন কেনা নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস সংগ্রাম আগামী ৯ জুলাই বিজয়ের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল। এদিকে বিস্ফোরণে বৈরুত বন্দর এলাকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লেবানন সরকার বৈরুত বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। লেবাননের তিনটি সমুদ্র বন্দরের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য এই বন্দর আবার কবে নাগাদ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে তা এখনই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মাত্র দুই দফা বিস্ফোরণ আর ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা সামলাতেই এখন ব্যস্ত পুরো লেবানন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর