মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কর্মকর্তা পিডি নিয়োগ পেলেন প্রকল্পে

দন্ড মওকুফ করেননি রাষ্ট্রপতি

নিজামুল হক বিপুল

প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে লঘুদন্ড দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তার শাস্তি মওকুফ না করলেও তাকেই আবার প্রায় ৭৪ কোটি টাকার আরেকটি বড় প্রকল্পে পিডি বানিয়ে দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ডা. আজিজুল ইসলাম নামের এ কর্মকর্তা বর্তমানে কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের অতিরিক্ত ভেটেরিনারি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল ইসলাম প্রিন্সিপাল কাম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন প্রকল্পে দায়িত্ব পালনকালে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর বিধি ৩(বি) ও ২ ডি অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা দায়ের করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। তার ব্যক্তিগত শুনানি ও প্রাসঙ্গিক বিষয় পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর ওই প্রকল্পের ডিপিপি, সব ডকুমেন্ট, নথিপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ইত্যাদি বিশদভাবে পর্যালোচনা করে ডা. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং প্রথমবারের মতো অপরাধ করায় আজিজুল ইসলামকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৪(২)(এ) অনুসারে তাকে তিরস্কার দন্ড প্রদান করা হয়। সে তিরস্কার দন্ড মওকুফের জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তার দন্ড মওকুফের আবেদন না-মঞ্জুর করেন। একই বছরের ১৩ নভেম্বর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল্লাহ আল জাকী স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়, আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নম্বর-১১/২০১৬-এ প্রদত্ত ‘তিরস্কার’ লঘুদন্ড মওকুফের আপিল আবেদন রাষ্ট্রপতি না-মঞ্জুর করেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি দন্ড মওকুফ না করলেও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দন্ডপ্রাপ্ত ডা. আজিজুল ইসলামকেই ৭৩ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্প নামের এ প্রকল্পটির মেয়াদ হচ্ছে জুলাই, ২০১৯ থেকে জুন, ২০২২ সাল পর্যন্ত। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটিতে আজিজুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয় মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী (বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী) আশরাফ আলী খান খসরু এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রইছউল আলম মন্ডলের মেয়াদে। তিনি বর্তমানে অবসরোত্তর ছুটিতে রয়েছেন। মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, সাবেক সচিব নিজে উৎসাহিত হয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল ইসলামকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর