শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

হুন্ডি কমায় বৈধ পথে বাড়ছে রেমিট্যান্স

দুই শতাংশ প্রণোদনার ফলে হুন্ডির মতো অবৈধ পথ ছাড়ছেন প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হুন্ডি কমায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে। নগদ দুই শতাংশ প্রণোদনা পাওয়ায় টাকা পাঠানোর বেআইনি পন্থা অবলম্বন ছেড়ে দিয়ে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানোর দিকে ঝুঁকছেন। ফলে রেমিট্যান্স বাড়ছে হুহু করে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৮২ বিলিয়ন ডলারে যা স্বাধীনতার পর থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারী সত্ত্বেও আলোচ্য চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি) দেশের ইতিহাসে একক মাসে এর আগে কখনো এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ায় প্রবাসীরা এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। তাই প্রতিনিয়তই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। জানা গেছে, এক সময় প্রবাসীরা বেশির ভাগ অর্থই পাঠাতেন হুন্ডিতে। এখন ওভাবে পাঠানোর মাত্রা কমে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত থাকলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। একই সঙ্গে হুন্ডি কমাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি বাড়ানো জরুরি এবং প্রবাসীদের হুন্ডির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে পারলে এক সময় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর মাত্রা শূন্যে নেমে আসবে। এতে একদিকে বৈধ পথে লেনদেন বাড়বে। প্রবাসীরাও নগদ প্রণোদনার অর্থে লাভবান হবেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হবে। যা দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যকে বিশ্বে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও শুধু জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই কঠিন সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করেছে। অর্থনীতির চাকাকে বেগবান রাখতে বড় অবদান রাখছেন প্রবাসীরা। গত জুন মাসের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৮৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি দেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৮ দশমিক ৪৮২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত ৩০ জুন ২০২০ তারিখে বাংলাদেশের  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক ০১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেটা তখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল সর্বোচ্চ। মাত্র এক দেড় মাসের ব্যবধানে সেটি পৌঁছেছে ৩৮ দশমিক ৪৮২ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রেমিট্যান্সে দেশের এ অনন্য রেকর্ডে প্রবাসীদের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গত অর্থবছরের শুরু থেকে প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের ওপর ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত আছে যার ফলে গত বছর ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি অর্থবছরে ৩-৫ বিলিয়ন ডলার বাড়তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। সামনের দিনে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আনতে যত কৌশল নিতে হয় সেটা আমরা নেব। দেশের প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা আর মমত্ববোধ রয়েছে প্রবাসীদের। এ জন্য তাদের টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যত বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর