নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)-এর টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করতে নিরাপদে দেশে ফিরতে চান প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার। এজন্য আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে গতকাল আবেদন করা হয়েছে। তবে পিকে হালদার কবে, কখন, কীভাবে ফিরতে চান তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবে আদালত।
গতকাল হাই কোর্টে আইএলএফএসএলের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের করা আবেদনে, কোম্পানি থেকে সরাসরি বা ভিন্নভাবে নেওয়া ঋণ উদ্ধারে আদালতের হেফাজতে থেকে স্বাধীন এবং নিরাপদ চলাচলে পিকে হালদারকে বিদেশ থেকে নির্বিঘ্নে দেশে প্রবেশের অনুমতি দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুদকের প্রতি নির্দেশনা জারির আর্জি জানানো হয়।
গতকাল হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, দেশে ফেরার ফ্লাইট শিডিউল এবং কোন তারিখে, কোন সময়ে পিকে হালদার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন, তা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ তার সঙ্গে এসএমএস বা ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারে। পিকে হালদারের বিষয়ে এসব তথ্য জানার পর কোম্পানির আইনজীবী আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করতে পারবেন। এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল, দুদকের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুদকের প্রতি প্রয়োজনীয় আদেশ দেবে। জানা গেছে, গত ২৮ জুন পিকে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেন। এক পৃষ্ঠার আবেদনের সঙ্গে তিন পৃষ্ঠার ব্যক্তিগত পরিচিতি সংযুক্ত করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দেওয়া ওই আবেদনে তিনি বলেন, আইএলএফএসএল তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মালিকানার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। তার অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা জটিল আকার ধারণ করেছে। দেশে ফিরতে পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট কেটে যাবে এবং করোনা সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। পিকে হালদারের আবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিনি ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে দেশে ফিরতে চান। দেশে ফিরে তার সব প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আইএলএফএসএলসহ অন্যান্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দায়দেনা মিটিয়ে ফেলতে চান। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আইএলএফএসএল আদালতের শরণাপন্ন হয়। প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।