সোমবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোট পড়েছে ৬১.৯২ ভাগ

নৌকায় ৬০ শতাংশ ধানের শীষে ১৭.৯০, বিএনপি ৩০ পৌরসভায় একটিতে আওয়ামী লীগ জামানত হারাল

গোলাম রাব্বানী

দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে গড়ে ভোট পড়েছে ৬১.৯২ শতাংশ। এর মধ্যে ইভিএমে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৮৩.৪৪ শতাংশ এবং ব্যালটে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৮৫.০৪ শতাংশ। মোট কাস্টিং ভোটের ৬০ শতাংশই পড়েছে নৌকায়। আর ধানের শীষে পড়েছে ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এদিকে দ্বিতীয় ধাপে বিএনপির প্রার্থীরা চার পৌরসভায় জয় পেলেও ৩০টিতেই জামানত হারিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেলেও হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় জামানত হারিয়েছেন নৌকার প্রার্থী। দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্বাচনে ব্যালটে সর্বোচ্চ ৮৫.০৪ শতাংশ ভোট পড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায়। দ্বিতীয় ধাপের ব্যালটে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৫৬.৪০ শতাংশ। আর ইভিএমে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভায় ৮৩.৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে ইভিএমে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে সাভার পৌরসভায় ৩৩.৫৯ শতাংশ। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, দ্বিতীয়

ধাপে ৬০ পৌরসভায় বেসরকারি ফলাফলে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৬০ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মোট মেয়র হয়েছেন ৪৫ জন। এর মধ্যে ৪১ জন ভোটে ও চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ সদরের একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ফলাফল নির্ধারিত হয়নি। তবে সেখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে মেয়র হয়েছেন চারজন। স্বতন্ত্র মেয়র হয়েছেন আটজন; এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছয়জন ও বিএনপির দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির একজন ও জাসদের একজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় ভোট চলে। এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হয় ইভিএমে, ৩১ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক যুগ্ম-সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, এ ধাপে ২০ লাখ ৯১ হাজার ৬৮১ ভোটের মধ্যে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৬ ভোট পড়েছে। সে হিসাবে ভোটের হার হচ্ছে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ৬০ পৌরসভার মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদরের একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ফলাফল নির্ধারিত হয়নি। তবে সেখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে আছেন। বাকি ৫৯ পৌরসভার মধ্যে ৪১টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আরও চার পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির চারজন, জাতীয় পার্টির একজন, জাসদের একজন এবং আট স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপে অর্ধেক এলাকায় ভোটে ‘জোরজবরদস্তি’সহ বেশ কিছু অভিযোগে ওঠে। গাইবান্ধায় ভোট শেষে ব্যালট পেপার ও সরঞ্জাম নিয়ে ফেরত আসার সময় পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় ফল ঘোষণার পর দুই পক্ষের সংঘর্ষে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী একজন নিহত হন। সহিংসতা বাড়ায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় পৌরসভা ভোটের পর দুই জায়গায় সংঘর্ষের বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী বিজয় মিছিল বের করা যাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিজয় মিছিল বের করা হয়েছিল এবং দুষ্কৃতকারীরা একজনকে হত্যা করেছে। মিছিল করা ঠিক হয়নি। আর যারা হত্যা করেছে, এটা জঘন্য অপরাধ করেছে। এর কোনোটাই কাম্য নয়। নির্বাচনের সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য অপশক্তি এগুলো করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে, যাতে নির্বাচন-পরবর্তী বিজয় মিছিল না হয়। তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটল। কারও কোনো অবহেলা আছে কি না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব নাগরিকের নিজেরও। প্রথম দায়িত্ব নিজের। শঙ্কা বোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে। এরপর কিছু না করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দোষ দেওয়া যায়।

২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভায় মেয়র পদে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়ে। তাতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির ধানের শীষের দুজন এবং তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন। তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট রয়েছে পৌরসভায়।

জামানত হারাল বিএনপি : ৩০ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন, সেগুলো হলো- দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ; কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী; গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ; বগুড়ার সারিয়াকান্দি; রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ ও আড়ানী; নাটোরের গোপালপুর ও গুরুদাসপুর; সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া; নরসিংদীর বেলকুচি ও রায়গঞ্জ; পাবনার ঈশ্বরদী; মেহেরপুরের গাংনী; কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর ও শৈলকূপা; বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট; মাগুরা সদর; নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ; ঢাকার সাভার; নরসিংদীর মনোহরদী; শরীয়তপুর সদর; সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর; মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া; ফেনীর দাগনভূঞা; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বান্দরবানের লামা।

আওয়ামী লীগ জামানত হারাল এক পৌরসভায় : হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত। তিনি ভোট পেয়েছেন ৬০৮। এখানে বিএনপিদলীয় প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান মানিক বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫ হাজার ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ কুমার সাহা নারকেলগাছ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ১৮৫ ভোট। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম মুসলিম পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৫ ভোট। এ পৌরসভায় মোট ভোট পড়েছে ৮১.৯৭ শতাংশ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর