শিরোনাম
সোমবার, ৩১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

ফের ভূমিকম্প অনুভূত, ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতান বন্ধের নির্দেশ সমন্বিত আগাম প্রস্তুতি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

সিলেটে রয়েছে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে পরিচিত সিলেটে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ভেঙে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল ভোরে ও আগের দিন শনিবার মিলিয়ে পাঁচ দফা ভূমিকম্প হওয়ায় বড় দুর্যোগের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ৮টি শপিং মল আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা আবাসিক ভবনগুলোর বাসিন্দাদেরও কয়েক দিনের জন্য অন্য কোথাও সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায়  জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ গুরুত্বপূর্ণ সব দফতর ও অফিস সমন্বিত আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরীর ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর করপোরেশনের পক্ষ থেকে বারবার নোটিস দেওয়ার পরও মালিকরা ভবনগুলো ভাঙেননি। নানা অজুহাতে তারা ভবনগুলো ভাঙা থেকে বিরত রয়েছেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে সরকারি অফিস, শপিং মল ও আবাসিক ভবন রয়েছে। সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ৩টি মার্কেটও রয়েছে। স্বেচ্ছায় এসব ভবন না ভাঙলে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।

শনিবার ও গতকাল রবিবারের ভূমিকম্পের পর এসব ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেছে সিটি করপোরেশন। গতকাল দুপুরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিদর্শনে বের হয় সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্ত বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন শেষে মেয়র আরিফ ঝুঁকিপূর্ণ মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় ভবন, মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশনসহ ৮টি মার্কেট আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া যেসব অফিস ও আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে সেগুলোর বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে তোলা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র।

এদিকে দুর্যোগ দেখা দিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও জানমাল রক্ষায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল বিকালে প্রশাসন ও জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে গত শনিবারও সমন্বিত সভা করে সিটি করপোরেশন। উভয় সভায় সব প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি রোধে আগাম সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। প্রতিষ্ঠানটির সিলেট অফিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, কোনো ধরনের দুর্যোগ দেখা দিলে তা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মীদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফের ভূমিকম্প : গতকাল ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে সিলেটে ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, রবিবার ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২০৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। অর্থাৎ এই ভূমিকম্পটিরও উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। তাই আগামী ৩-৪ দিন সিলেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই কয়েক দিন সবার সতর্ক থাকা উচিত। এর মধ্যে বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর