করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশে চলমান লকডাউনের সময়সীমা আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহ ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার পর ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস খুলবে। সীমিত পরিসরে ‘রোটেশন করে’ যানবাহন চলবে। তবে টিকা না নিয়ে কেউ কাজে যোগ দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগামী এক সপ্তাহে ১ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ন্যূনতম দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ফলে আশা করছি কষ্ট করে ভ্যাকসিন নেওয়ার পিছনে দৌড়াতে হবে না। প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে একসঙ্গে সপ্তাহব্যাপী ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেখানে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার, বাসের হেলপারদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। যার যার এলাকা থেকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ১১ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের ওপরের কোনো মানুষ ভ্যাকসিন ছাড়া মুভমেন্ট করলে সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। রাস্তাঘাটে, গাড়িঘোড়ায়, মোটরসাইকেল, সাইকেল, টেম্পো, বাস, ট্রেনে হোক চলাচল করলে টিকা নেওয়া থাকতে হবে। আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি। আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গ্রামে গ্রামে টিকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ বলতে পারবে না ভ্যাকসিন পাইনি। আইন না মানলে অধ্যাদেশ জারি করে হলেও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা বিভিন্ন লেভেলে দেওয়া হতে পারে, যদি আবেদন-নিবেদনে কাজ না হয়। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর অবস্থানে যাব। মন্ত্রী বলেন, কেউ ভ্যাকসিন নিয়েছে কি না, সেই তথ্য ওয়েবসাইটে চলে যাবে, কেউ মিথ্যা বলতে পারবে না। দোকানপাট খোলার আগে ৭, ৮, ৯ আগস্ট তিন দিন সুযোগ রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে যাতে ভ্যাকসিন নিতে পারে সেই সুযোগ দিচ্ছি। ১১ আগস্ট থেকে যাতে দোকানপাট খুলতে পারে সভা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেশেই করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস কত দিন চলবে কেউ জানে না। যত শিগগির সম্ভব নিজেরা বা অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে যাতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি। সেটা হলে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেব। চেষ্টা করব যাতে ৪/৫ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদন করা যায়। গুরুতর কভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালে আইসিইউ সংকট কাটাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের কনভেনশন সেন্টারে আগামী শনিবার থেকে ডেডিকেডেট আইসিইউ চালু হবে বলে জানান মন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ৭ আগস্ট থেকে সাত দিনের জন্য দেশের প্রত্যেক ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে প্রায় ১ কোটি টিকা দেব। সেই টিকা দিতে অনেকের সহযোগিতা লাগবে। এ জন্য সভা করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বাহিনী প্রধানদের কাছে সেই সাহায্য চেয়েছি। টিকার পাশাপাশি মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে যদি সঠিকভাবে এনফোর্স করতে চাই তাহলে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে কিনা মাস্ক যারা পরবে না তাদের কিছুটা হলেও জরিমানা করতে পারে। এজন্য অধ্যাদেশ লাগবে। আলোচনা হয়েছে, হয়তো বা আমরা সেদিকেও যাব। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের হাতে এখন প্রায় সোয়া কোটি টিকা আছে। তা ছাড়া এ মাসে আরও প্রায় এক কোটি টিকা হাতে এসে পৌঁছাবে। স্থানীয়ভাবেও টিকা উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। ইতিমধ্যে চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি কোম্পানি মিলে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিও পাওয়া গেছে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেয় সরকার। এবার ‘কঠোরতম’ বিধিনিষেধের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সেটা আর রাখতে পারেনি। ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা চলমান বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পর শ্রমিকরা গ্রামের বাড়ি থেকে দুর্ভোগ নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন কলকারখানা অভিমুখে রওনা হন। একপর্যায়ে সাময়িক সময়ের জন্য গণপরিবহন চালুর অনুমোদন দেয় সরকার। এসব সিদ্ধান্তের পর রাস্তাঘাটে চলাচল বেড়েছে, খুলেছে দোকানপাট। শিথিল হয়ে গেছে লকডাউন। গতকাল সারা দেশেই ছিল এই ঢিলেঢালা লকডাউন।