মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টায় ১০ জঙ্গির ফাঁসি বহালের রায়ে পর্যবেক্ষণ

ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছিল আসামিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ১০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের ৮৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, আসামিরা ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে তৎকালীন সরকারকে দোষারোপ করেছিল। একটি অবাস্তব এবং ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি     অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেছিল। এ মামলায় হাই কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ড. মো. বশির উল্লাহ এবং আসামিপক্ষে এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসিরউদ্দিন। এ ছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন অমূল্য কুমার সরকার। রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, আসামিদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামিরা দেশের প্রচলিত আইন মান্য করতে নারাজ। তারা জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে চায়। কিন্তু তাদের এ ধরনের চিন্তা দেশের প্রচলিত আইন কখনো সমর্থন করে না। কারণ তারা সবাই জন্মগতভাবে এ দেশের নাগরিক। ষড়যন্ত্র করে ও দুটি বোমা পোঁতার মধ্য দিয়ে যে অপরাধ তারা সংঘটিত করেছে, তা অত্যন্ত ভয়ংকর ও জঘন্য। এ অবস্থায় কয়েকজন কয়েদির (দন্ডিত আসামি) দীর্ঘ হাজতবাসে তাদের দন্ড লঘু করার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এ ধরনের সংঘটিত অপরাধকে শুধু চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হলে তা অযৌক্তিক বিবেচিত হবে। কারণ মূল উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আসামিরা তাদের লক্ষ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ আরও যাঁরা ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ভোররাতের বিভীষিকাময় ঘটনার মধ্য দিয়ে শহীদ হওয়ার কারণে এ সার্বভৌম দেশটি যতটুকু পিছিয়ে গিয়েছিল, ঠিক আবারও একটি ঘটনার অবতারণা শুরু হয়েছিল এ ঘটনার মধ্য দিয়ে।

জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরে বিচারপতি বলেন, দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে এমনিভাবে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা বিরল। কাজেই এ মামলায় সংঘটিত ঘটনাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন ওয়াশিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন, মো. রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই এবং মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর। এর মধ্যে মো. ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই পলাতক। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বহাল রয়েছে মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদের। এ ছাড়া আসামি আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

সর্বশেষ খবর