মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস

সম্ভব হলে দুই ডোজের ব্যবধান কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস

এখন থেকে প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালন করবে সরকার। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ-সংক্রান্ত বিষয় উত্থাপন করলে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ অনুমোদনের কথা জানান। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালন এবং একই সঙ্গে দিবসটি পালনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ  বিভাগের জারি করা এ-সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তারা (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ) শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেইজ নিয়ে এসেছেন। সেখানে পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে। তারা ১০-১২ বছর ধরে শেখ রাসেল দিবস পালন করছে ১৮ অক্টোবর। শিশু একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এটা পালন করছে। তারা বলেছে, দেশের শিশুদের মধ্যে একটা বড় প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য যদি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করা হয় তাহলে এটা ভালো হবে। ক্যাবিনেট সেটা অ্যাগ্রি করেছে।’

এদিকে গতকাল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালনের প্রস্তাব পেশ করেন এবং এর যৌক্তিকতা মন্ত্রিসভায় তুলে ধরেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ১৮ অক্টোবরকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করায় আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এখন থেকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়সহ সর্বস্তরে প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর ‘শেখ রাসেল দিবস’ জাতীয়ভাবে পালিত হবে, যা আগামী দিনের শিশুদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকবে। শেখ রাসেলের এই শূন্যতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তার আদর্শিক অবস্থান ও মানসিক দৃঢ়তার স্থানটিকে পূরণ করবে এবং জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রকৃত ইতিহাস জানার সুদূরপ্রসারী সুযোগ এনে দেবে।

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করে ঘাতকেরা।

সম্ভব হলে দুই ডোজের ব্যবধান কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : করোনা টিকার দুই ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমানো যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কারখানায় যে শ্রমিকরা কাজ করেন তাদের বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। ঈদ ছাড়া শুরু থেকেই আমরা কারখানা, প্রোডাকশন, পণ্যের সরবরাহ এগুলো কখনই বন্ধ করিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটা চুক্তির মতো করেও ফেলেছে, ৬ কোটি ভ্যাকসিন পাবে সিনোফার্ম থেকে। টিকা পাওয়া মাত্রই শ্রমিকদের আলাদা প্রোগ্রামের আওতায় এনে দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এটা কনফার্ম করেছেন, উনি এটা দেখবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন শুধু শ্রমিকরা নয়, তাদের পরিবারসহ টিকা দিতে হবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শুধু তাই নয়, আমরা যে এক মাসের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিচ্ছি, অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে আরও কম সময়ে দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছে। সে বিষয়টিও বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। টেকনিক্যাল সাইড দেখে কম সময়ের গ্যাপে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায় কি না তা দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী : এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের এখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দ্বিতীয় ডোজের সময়টা একটু কমিয়ে দেওয়া যায় কি না। এখন আমরা এক মাসে দিচ্ছি। এক মাসের পরিবর্তে আমরা ১৫ বা ২০ দিন করে দিতে পারি কি না বিষয়টি আমাদের দেখতে বলেছেন। যদি সম্ভব হয় আমরা তা করব।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের আরও ৭-৮ কোটি লোককে সরকার করোনার টিকা দেবে। আমরা যদি ১৬ কোটি টিকা পেয়ে যাই তাহলে ৮ কোটি লোককে দিতে পারব। এ টিকাগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই আসার কথা। বিনামূল্যে কোভ্যাক্সের কিছু টিকাও আসবে। ১৬ কোটির থেকেও বেশি হবে টিকা। সংক্রমণ কমে আসছে। গতকালও ১৫ শতাংশে নেমেছে। যা ৩২-এ উঠেছিল। মডার্নার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে, ওটা আমাদের হাতে আছে। হাতে আরও আছে সিনোভ্যাকের দ্বিতীয় ডোজ। অ্যাস্ট্রাজেনেকা আমরা পেয়েছি। আশা করি এ মাসের শেষে ফাইজার আরও পাব। আমাদের ৬০ লাখ দেওয়ার কথা, এ মাসের শেষে কিছু পাব। সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকিগুলো পেয়ে যাব। চীনের সিনোফার্মের ১০ লাখ টিকা আসবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত গত ১০ থেকে ১৫ দিনে টিকার বিষয়ে অনেক কাজ করা হয়েছে। অর্ডার দেওয়া হয়েছে অনেক। চীনে প্রায় নতুন ৬ কোটি ডোজের জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তার আগে দেড় কোটি ডোজের অর্ডার ছিল। মোট সাড়ে ৭ কোটি। আমাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অফার দেওয়া হয়েছে আমরা টিকা নেব কি না। সেগুলো কিনে নিতে হবে। দেশে টিকার সংকট হবে না উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ভর্তুকি রেটে সিনোফার্মের ৩ কোটি, আর সিনোভ্যাকের সাড়ে ৭ কোটি- এ মোট সাড়ে ১০ কোটি আমরা কিনছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা বিনামূল্যে দেবে। সেটা চলমান আছে। এর মধ্যে ফাইজার আসবে বিনামূল্যে। যেভাবে আমরা ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছি আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাতে বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের খুব একটা অভাব থাকবে না। যদি সবাই কমিটমেন্ট রক্ষা করে। তিনি বলেন, আমরা ফ্রন্টলাইনারদের দিচ্ছি। তাদের পরিবারের সদস্যদের দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের, বিদেশে চাকরি নিয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের দেওয়া হচ্ছে। সব কারখানার শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার দাবি উঠেছে। টিকা পেলে আমরা সব শ্রমিকদের দেব। আমরা চাই সব মানুষ টিকা পাক, সুরক্ষিত থাকুক।

গণটিকা কবে শুরু হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে গণটিকার কার্যক্রম আমরা করছি না। কারণ সে পরিমাণ টিকা আমাদের হাতে নেই। আমরা গণ কথাটা হয়তো আগামীতে আর ব্যবহার করব না। আমাদের হাতে যখন যতটুকু টিকা আসবে, সে টিকা যত মানুষকে দিতে পারব তত মানুষের কাছে বার্তা যাবে, তারাই আসবে। লম্বা লাইন আর করতে দেব না। আগে নিবন্ধন করেও অনেকে এখনো এসএমএস পায়নি। নিবন্ধিত সাড়ে ৩ কোটির মধ্যে ২ কোটির বেশি টিকা পেয়েছে। আমাদের কাছে যতটুকু টিকা আছে সে টিকা দিতে পারব। টিকা কতটুকু হাতে আছে, সে অনুযায়ী নিবন্ধন দেব।

১৮ বছরের বেশি বয়সের অনেকে এনআইডি কার্ড না থাকায় নিবন্ধন করতে পারছে না, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে নিবন্ধন করতে দেব এবং কর্মসূচি দেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর