ই-কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকারকে এমন উপায় খুঁজে বের করতে হবে যাতে গ্রাহকের লেনদেন সুরক্ষিত থাকে। এটি করতে না পারলে দেশে সম্ভাবনাময় এ বাণিজ্যে আস্থা ফেরানো যাবে না।
চলমান ই-কমার্স সংকট নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে এ কথা বলেন অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এবং এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ।
সাবেক সচিব মাহবুব বলেন, আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলাম তখন এমএলএম কোম্পানিগুলো পরিচালনার জন্য একটি আইন করেছি। ওই আইনটি অনুসরণ করলেও ই-কমার্স প্রতারণা ঠেকানো যেত। তিনি বলেন, কোনো একটি ব্যবসায় প্রতারণার ঘটনা হঠাৎ ঘটে না, কিন্তু ঘটে যাওয়ার পর যখন গ্রাহক ক্ষতির মুখে পড়েন তখন নানা ধরনের আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়। সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে বারবার এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ই-কমার্স ব্যবসা থেকে এরই মধ্যে গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। এ টাকা কোথায় গেছে কেউ বলতে পারবে না। এমনকি এ টাকা উদ্ধার করে গ্রাহককে ফিরিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। উপরন্তু পণ্য কেনার জন্য ব্যক্তিগত লেনদেনের দায়ও সরকার নেবে না। ই-কমার্স কোম্পানির যদি স্থাবর সম্পদ থাকে সে ক্ষেত্রে হয়তো ওই সম্পদ বিক্রি করে কিছু টাকা গ্রাহককে ফেরত দেওয়া হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও আইনি জটিলতা আছে। কোম্পানির সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে শেয়ারধারীদের অনুমতির বিষয় আছে। এ ছাড়া সরকারের এমন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই- যে বা যারা প্রতারক কোম্পানির সম্পদের দায়িত্ব নিয়ে বিক্রি করে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেবে। সাবেক এই আমলা বলেন, বর্তমানে যেভাবে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে তাতে এ ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ দরকার। ওই কর্তৃপক্ষকে এমন ক্ষমতা দিতে হবে যারা ই-কমার্স বাণিজ্যের পাশাপাশি গ্রাহকের লেনদেনের ঝুঁকি নিরূপণেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে।ভবিষ্যতে কীভাবে গ্রাহকের লেনদেনের ঝুঁকি মোকাবিলা হবে, কিংবা অর্থ ফেরতের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা যখন বিমানের টিকিট কাটি তখন ওই টিকিটের সঙ্গে ঝুঁকিবীমার টাকা কেটে নেওয়া হয়, যা আমরা জানতেও পারি না। যেহেতু ই-কমার্স লেনদেনে ঝুঁকি আছে সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের লেনদেন ইন্স্যুরেরেন্সের আওতায় আনা যেতে পারে। প্রতিটি লেনদেনের সঙ্গে ন্যূনতম একটি অংশ ইন্স্যুরেন্স হিসেবে কেটে রাখা হবে, যা ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে। এ উদ্যোগটি সরকারের দুটি খাতের উন্নয়ন ঘটাবে। ই-কমার্স ব্যবসায় যেমন গ্রাহকের আস্থা ফেরত আসবে, তেমনি বীমা খাতেরও উন্নয়ন হবে।