বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ই-কমার্সের সব লেনদেন তদারকি হবে

ইভ্যালি ই-অরেঞ্জের সম্পদ উদ্ধারে কমিটি মন্ত্রিপরিষদের - সব প্রতিষ্ঠান আসবে ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতায় - বোর্ড গঠনে হাই কোর্টে তিন সচিবের নাম

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ই-কমার্সের সব লেনদেন তদারকি হবে

ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, যে কমিটি ইভ্যালি

ই-অরেঞ্জসহ অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ-সম্পদ উদ্ধারে সরকারের করণীয় নির্ধারণ করে দেবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে কিংবা মামলা চলছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য, সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতির তথ্য সংগ্রহ করবে এ কমিটি। এরপর উদ্ধারকৃত সম্পদ দিয়ে কীভাবে গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সরকারের করণীয় নির্ধারণ করে এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিসধ বিভাগে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। শুধু তাই নয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের লেনদেন তদারকি এবং আয়-ব্যয় ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতায় আনতেও সরকারকে সুপারিশ দেবে এ কমিটি। এদিকে ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ড গঠনের বিষয়ে তিন সচিবের নাম হাই কোর্টে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল আদেশের বিষয়ে দিন ধার্য থাকলেও তা পিছিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে করণীয় নির্ধারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত মঙ্গলবার ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইইউনিট, এনবিআর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথক আইন ও কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে সুপারিশ দিতে আরও দুটি কমিটি গঠন করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই দুটো কমিটির মেয়াদ শেষের আগেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মঙ্গলবার এ কমিটির বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করে।  সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দেশে ভুঁইফোরের মতো শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও কার্যত এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো তদারকি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু তদারকি করলেও সমন্বিত উদ্যোগ নেই। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নতুন যে কমিটি করা হয়েছে, এ কমিটি মূলত অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক ব্যবসার ফলে যেসব ভোক্তা প্রতারিত হয়েছেন তাদের অধিকার সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণ করবেন। এ জন্য তাদের সুনির্দ্দিষ্ট সাতটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গঠিত কমিটিকে কার্যপরিধি উল্লেখ করে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ কমিটিকে যে সাতটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : (১) ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, সংস্থাগুলোকে একই ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে আনা ও এসব সংস্থার মধ্যে আন্তযোগাযোগ তৈরি করা; (২) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্সের আওতায় আনা; (৩) অভিযুক্ত ই-কমার্স আর্থিক লেনদেনের তথ্য, মালিকানাধীন সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতির হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহসহ প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের পদ্ধতি নির্ধারণ; (৪) ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণ; (৫) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকি ও পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে ভবিষতে করণীয় নির্ধারণ; (৬) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন তদারকির আওতায় আনা এবং (৭) ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতায় আনা।

ইভ্যালির বোর্ড গঠনে তিন সচিবের নাম : প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি লিমিটেড ব্যবস্থাপনায় বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে সাবেক তিনজন সচিবের নাম হাই কোর্টে প্রস্তাব করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চে গতকাল তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবের নাম দাখিলের কথা বলেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। তবে বোর্ড গঠনের বিষয়ে গতকাল আদেশের দিন পিছিয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত তিনজন হলেন- অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী (ভূমি মন্ত্রণালয়), অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ) ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী (ভূমি সংস্কার বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান)।

রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন জানান, বোর্ড গঠনের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যালোচনা করে আদালত আগামী সপ্তাহে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরবর্তী আদেশের দিন-তারিখ জানানো হয়নি। ইভ্যালির দুজন সদস্যই (চেয়ারম্যান ও সিইও) কারাগারে থাকায় ওই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার একই বেঞ্চ ইভ্যালির বিষয়ে চার সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেওয়ার কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনজীবীকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা বলে বর্তমান বা সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব এমন তিনজনের নাম দিতে বলেন। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে একজনের নাম চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে আদালত বুধবার আদেশের জন্য দিন রাখেন।

সর্বশেষ খবর