মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জি২০-এর ব্যর্থতার পর শেষ ভরসা কপ২৬

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজের কাজ কিছু হয়নি রোমে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে। বিশ্বনেতাদের কথাই তার প্রমাণ। অথচ সারা বিশ্বে যে কার্বন নিঃসরণ হয় তার ৮০ শতাংশই করে জি২০ভুক্ত দেশগুলো। বিশ্ব উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা, সেটাই আরও একবার উচ্চারিত হয়েছে জি২০তে। এতে বিশ্বনেতারাই হতাশ। তাঁরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনই এখন শেষ ভরসা। প্রায় ২০০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধি নিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় ২৬তম ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অব পার্টিস বা কপ-২৬ হয়েছে রবিবার। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির গতি কমাতে এবং এরই মধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ সম্পর্কে দুই সপ্তাহ ধরে চলবে দেনদরবার। রবিবার সম্মেলন শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পর। গতবারের সম্মেলন কপ২৫-এর সভাপতি চিলির ক্যারোলিনা স্মিডিট এর উ?দ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর কপ-২৬-এর সভাপতি অলোক শর্মার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। অলোক শর্মা বলেন, ‘বিশ্বের ১৯৫টি দেশের সর্বসম্মত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- যে হারে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটছে তাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। তবে সদস্য দেশগুলো যে অঙ্গীকার করেছে তাতে ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্?গীরণ কমবে। এ অঙ্গীকারের মাত্রা আরও অনেক বাড়াতে হবে।’ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির মাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে এ সম্মেলনকে ‘শেষ ও সর্বোত্তম ভরসা’র সম্মেলন আখ্যা দিয়েছেন ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মা। সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক কার্যালয়ের প্রধান প্যাট্রিসিয়া এস্পিনোসা বলেন, ‘সরকারপ্রধানদের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। তাঁরা গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গীরণ কমিয়ে আনতে পারেন। এতে উষ্ণায়নের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো টিকে থাকতে পারবে। অন্যথায় আমাদের এ পৃথিবীকে কঠিন ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়াটাই মেনে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গ্লাসগোয় আমাদের অগ্রগতি আনতেই হবে। এখানে অবশ্যই সাফল্য দেখাতে হবে।’ অন্যদিকে কপ২৬-এর আয়োজক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, দুই দিন ধরে রোমে বিশ্বনেতারা যে আলোচনা করলেন তা ‘যথেষ্ট নয়’। পৃথিবী গ্রহের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ভয়াবহ হতে পারে বলে জনসন সতর্ক করে দিয়েছেন। বরিস জনসন বলেন, গ্লাসগো যদি ব্যর্থ হয় তাহলে গোটা ব্যাপারটাই ব্যর্থ হবে।

তিনি বলেন, জি২০-তে বিশ্বনেতারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা ‘দ্রুত উষ্ণ হওয়া মহাসুমদ্রের তুলনায় বিন্দুমাত্র’। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘আমার আশা অপূর্ণ রেখেই রোম ত্যাগ করলাম। তবে একেবারে মাটির তলায় চাপা পড়ে যায়নি, এটাই যা।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন, জি-২০ সদস্য দেশ রাশিয়া ও চীন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আগমুহুর্তে এসে প্রতিশ্রুতিগুলোর বিষয়ে ‘তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না’। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইতালির রোমে সদ্য জি-২০ সম্মেলনে চীন, রাশিয়াসহ দূষণে অবদান রাখা প্রধান দেশগুলো এরই মধ্যে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে জ্বালানিনির্ভর দূষণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনার কথা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, তাতে বিশেষ আগ্রহ নেই চীন, রাশিয়ার। তবে রাশিয়া রবিবার বলেছে, তারা ২০৬০ সালের লক্ষ্যমাত্রায় অটল রয়েছে।

সর্বশেষ খবর