সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্বাচন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে

প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ‘অসহিষ্ণু’ মনোভাব দেশে গণতন্ত্রকে ‘অন্তিম অবস্থায়’ নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তার ভাষায়, নির্বাচন এখন ‘আইসিইউতে’ ও গণতন্ত্র ‘লাইফ সাপোর্টে’। আর এ সংকটের অবসান ঘটতে পারে সব দলের সমঝোতায়। মেয়াদ ঘনিয়ে আসা নির্বাচন কমিশনের এই কমিশনার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গতকাল বিকালে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে হাজির হন সাংবাদিকদের সামনে। এদিকে মাহবুব তালুকদার নিজের মত প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আজ সংবাদ সম্মেলন করবে ইসি। এতে সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা থাকবেন।

সহকর্মীদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে আলোচিত মাহবুব তালুকদার বরাবরের মতোই লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান, যার শিরোনাম তিনি দেন- ‘দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে আমার কথা’।

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। শেষ সময়ে এসে ইউপি নির্বাচনে গোলযোগ-সহিংসতা নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন তারা।

মাহবুব তালুকদার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ যতই ফুরিয়ে আসছে, নির্বাচন ব্যবস্থা ও অবস্থা দেখে ততই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি। আজও রূপকার্থে কিছু কথা বলতে চাই। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন এখন আইসিইউতে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র এখন ‘লাইফ সাপোর্টে।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, সংবিধানের বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও সুদীর্ঘ ৫০ বছরে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করা হয়নি। নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারের জন্য এই আইন প্রণয়ন অবধারিত হলেও তা যথেষ্ট নয়। এতে নিরপেক্ষভাবে সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সংরক্ষণ করা আবশ্যক এবং তা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ইউপিতে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সুপারিশ : এ বছর দুই ধাপে প্রায় ১২০০ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও দুই সহস্রাধিক ইউনিয়নে ভোট রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় অনেক প্রাণহানি ঘটেছে।

মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে রক্তাক্ত নির্বাচন বললে অত্যুক্তি হবে না। নির্বাচনের সময় ও তার আগে-পরে এ পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হন। জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয়- এ বার্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে পৌঁছাতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছি।

ইউপিতে দ্বিতীয় ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮০ জনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার দিকটি দেখিয়ে তিনি বলেন, একে আক্ষরিক অর্থে নির্বাচন বলা যায় না। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সেখানে নির্বাচন নেই।

তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে না হয়ে আগের মতো সবার জন্য উন্মুক্ত হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

তিনি বলেন, যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন ঠিক করে না, তার দায় কমিশন কেন নেবে? আমার মতে, পৃথক একটি স্থানীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ গঠন করে এসব নির্বাচন করা যায়। তবে এ পরিবর্তন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

সচিব থাকাই ‘যথেষ্ট’! : নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থা ও সচিবালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে আগেও ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ ধরে তিনি এবার বলেন, ‘সারা দেশে যদি সন্ত্রাসমুক্ত এ ধরনের নির্বাচন করা যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের বদলে একজন সচিবের অধীনে একটি সচিবালয় থাকলেই যথেষ্ট!’

সর্বশেষ খবর