সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

লুকোচুরি করতে আইন হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

লুকোচুরি করতে আইন হচ্ছে

ড. শাহদীন মালিক

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে এত দিন আমরা আইন করার কথা বলতাম, এখন আইন করে দিচ্ছে। আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি করার জন্যই এ আইন করা হচ্ছে। লুকোচুরি করা তো আইনের উদ্দেশ্য হতে পারে না।’ গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে মতামত তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন করে সুজন।

সুজনের নির্বাহী সদস্য শাহদীন মালিক বলেন, ২০০২ সাল থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আসীন হয়েছেন তারা সরকারের প্রতি কোনো না কোনোভাবে সহানুভূতিশীল। তাদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হলে তারা কী সার্চ করবেন? আর দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন। স্বীয় বিবেচনায় কাউকে মনোনীত করার ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে দেয়নি। বোঝাই যাচ্ছে মনোনয়ন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসবে। এটি হবে একটি পক্ষপাতদুষ্ট সার্চ কমিটি। তারা যে নামগুলো প্রস্তাব করবে তা জানার সুযোগ থাকছে না। তিনি বলেন, ‘সরকার-নির্ধারিত সার্চ কমিটি দিয়ে সরকার-নির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠিত হবে। এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কর্তৃত্ববাদীরা এমনভাবে নির্বাচন করে, যাতে তারা জয়ী হয়। এত দিন আমরা আইন করার কথা বলতাম, এখন আইন করে দিচ্ছে। আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি করার জন্যই এ আইন করা হচ্ছে। লুকোচুরি করা তো আইনের উদ্দেশ্য হতে পারে না।’ সুজনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংগঠনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলন হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সুজনের নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আবদুল মতিন, অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা কমিশনে থাকাকালীন যে খসড়াটি প্রস্তাব করেছিলাম, সেখানে বলা ছিল সুপারিশকৃত নামগুলো প্রথমে সংসদের বিশেষ কমিটিতে যাবে, সেখানে আলোচনা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। এই কমিটিতে সব দলের সমানুপাতিক অংশগ্রহণ থাকে। তাহলে প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কম থাকে।’ ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দুই মাস আগে আইনমন্ত্রীর কাছে আমাদের খসড়ার কপি দিতে গেলে তিনি সময় নেই বললেন। এখন কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই আইন পাসের জন্য তড়িঘড়ি করছেন। তাদের মতো করে নির্বাচন করার জন্যই আলোচনা না করে এ আইন করা হচ্ছে।’ বিচারপতি মো. আবদুল মতিন  বলেন, ‘আইনটি যে গুড মোটিভ নিয়ে করা হচ্ছে এ রকম কোনো নজির দেখছি না। রাখঢাক করে এ আইন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আগের মতোই ইলেকশন করা।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার জন্যই আইন করতে হবে। সেটা না হলে এ রকম আইন এখনই পরিত্যাজ্য। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ হলে সংবিধানের ষোল আনাই মিছে হয়ে যায়। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য করাই সংবিধানের মূল স্পিরিট।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘বারবার শুনে আসছি আইন করার সময় নেই, এখন করা যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপেও রাষ্ট্রপতি বলেছেন সময় নেই। এরপর হঠাৎ কী পরিবর্তন হয়ে গেল! মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন হয়ে গেল! এখন আদালতে যাওয়ার নাগরিক অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে।’ দিলীপ কুমার সরকার জানান, খসড়া আইনটির সঙ্গে সার্চ কমিটির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির জারি করা প্রজ্ঞাপনের পার্থক্য নেই বললেই চলে। এটা ঠিক নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন নয়, সার্চ কমিটি গঠনের আইন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর