শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

মাদক মামলায় কারাগারে আশীষ চৌধুরী

আদালত প্রতিবেদক

মাদক মামলায় কারাগারে আশীষ চৌধুরী

রাজধানীর গুলশান থানায় করা মাদক মামলায় গ্রেফতার চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এ মামলায় জামিন শুনানির জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এ আদেশ দেয়।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই শামীম হোসেন আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী সেলিম আশরাফ চৌধুরী জামিনের আবেদন করেন। তবে তিনি জামিনের আবেদনের বিষয়ে আগামী ১০ এপ্রিল শুনানি করতে চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বাসা থেকে ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও ২ লাখ টাকা উদ্ধার করে র‌্যাব। আশীষ রায় চৌধুরী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত এক নম্বর আসামি। তিনি একাধিক বেসরকারি এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন পদে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি জিএমজি এয়ারলাইনসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের ডিবির সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের অষ্টম তলায় ‘সুপার ট্রাম্পস ক্লাব’। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ-গান, মদ্যপান ও মহিলা দ্বারা অশ্লীল নৃত্য হতো এবং সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো। সোহেল চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে এমন আপত্তিকর পরিবেশ বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে সেখানে যান। তিনি সেখানে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সেই ক্লাবে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সোহেল চৌধুরী ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দেন। পরে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু কালা নাসির গুলি করতে গেলে তিনি বাথরুমে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। মেজর (অব.) হাফিজ তাদের অনুরোধ করে সোহেল চৌধুরীকে নামিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশীষ কুমার চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকান্ড ব্যাহত হয়। তারা তখন সোহেল চৌধুরীকে দেখাইয়া দেবেন বলে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সম্মুখে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা পেশাদার খুনিদের দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে বলে প্রমাণ হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মামলা শুরু হলেও নথি গায়েব হয়ে যাওয়ায় বিচারে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার চলার মধ্যেই পলাতক আসামি আশীষ রায়কে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর