শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

যেসব কারণে রোজা ভাঙে না

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

যেসব কারণে রোজা ভাঙে না

এমন কিছু কাজ আছে যার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। অথচ অনেকে এগুলোকে রোজা ভঙের কারণ মনে করেন। ফলে এমন কোনো কাজ হয়ে গেলে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করে ফেলেন। আবার দেখা গেছে, এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে গিয়ে অনেকেই অযথা নিজেকে কষ্টে ফেলে দেন। অথচ রোজার বিধান দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট দিতে চান না। বরং তোমরাই নিজেদের কষ্টে ফেলে রাখ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। আসুন জেনে নিই যেসব কারণে রোজা ভাঙে না। রোজা রেখে ভুলে পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না। তবে শর্ত হলো রোজার কথা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানাহার বর্জন করতে হবে। মুখে খাবার থাকলে তা ফেলে ভালোভাবে কুলি করতে হবে। আর যদি খাওয়া-দাওয়া শেষে রোজার কথা মনে পড়ে তাহলে আর কিছুই করতে হবে না। এভাবেই রোজা শেষ করতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা রেখে যে ব্যক্তি ভুলে আহার বা পান করল সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছন।’ (মুসলিম)। রাতে স্ত্রীসহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদিকের আগে গোসল করতে না পারলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কোনো ওজর ছাড়া, বিশেষত রোজা অবস্থায় দীর্ঘ সময় অপবিত্র থাকা অনুচিত। আম্মাজান আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘গোসল ফরজ অবস্থায় রসুল (সা.)-এর ভোর হতো এবং তিনি গোসল করে রোজা পূর্ণ করতেন।’ (বুখারি)। বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খেলে রোজা ভাঙবে না। তবে কামভাব নিয়ে চুমু খাওয়া যাবে না। আর তরুণদের যেহেতু এ আশঙ্কা থাকে তাই রোজা অবস্থায় এ কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, ‘আমরা রসুল (সা.)-এর মজলিসে বসা। এমন সময় একজন যুবক জিজ্ঞেস করল ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি কি রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু খেতে পারি? রসুল (সা.) বললেন, না, পারো না। এরপর একই প্রশ্ন এক বৃদ্ধ করলেন। রসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, আপনি পারেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বললেন, আমরা তখন অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম। নবী করিম (সা.) বললেন, আমি জানি, তোমরা কেন একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছ। শোনো, বৃদ্ধ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, কিন্তু যুবকের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’ (মুসনাদে আহমাদ)। তাবেয়ি আবু মিজলাজ (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে এক বৃদ্ধ রোজা অবস্থায় চুমু খাওয়ার মাসালা জিজ্ঞেস করল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। আবার এক যুবক এসে একই মাসালা জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)। শুধু যৌনচিন্তার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙবে না। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য, সব ধরনের কুচিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ আর রোজার হালতে তা আরও বড় অপরাধ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া, প্রথম খন্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা)। এ ছাড়া কামভাবের সঙ্গে কোনো মহিলার দিকে তাকানোর ফলে কোনো ক্রিয়াকর্ম ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙবে না। তবে রোজা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টি দেওয়া অনুচিত। আর অপাত্রে কুদৃষ্টি তো গুনাহ, যা রোজা অবস্থায় আরও ভয়াবহ। এতে ওই ব্যক্তি রোজার ফজিলত ও বরকত থেকে মাহরুম হয়ে যায়। জাবের ইবনে জায়েদকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর দিকে কামভাবের সঙ্গে তাকানোর ফলে বীর্যপাত ঘটেছে, তার কি রোজা ভেঙে গেছে? তিনি বললেন, ‘না। সে রোজা পূর্ণ করবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর