পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঢাকার প্রবেশমুখে যানজটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ সেতুর ফলে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গাড়ির চাপ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী ও বাবুবাজার এলাকায় যানজট তৈরি হবে। এ যানজট নিরসনে দ্রুত আউটার রিং রোড নির্মাণ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুটি উদ্বোধনের কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের সংক্ষিপ্ত রুটের কারণে ঢাকা-আরিচা রুট ৪০% আকর্ষণ হারাবে। ধারাণা করা হচ্ছে, এর ফলে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মসৃণ যাত্রার পর অভ্যন্তরীণ যানবাহনগুলো রাজধানীর দুটি প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী ও বাবুবাজারে আটকে থাকবে। যার ফলে এই রুটে ভ্রমণে অতিরিক্ত সময় লেগে যাবে। এদিকে নির্ভরযোগ সূত্র বলছে, এই জট এড়াতে সরকার একটি আউটার রিং রোডের পরিকল্পনা করেছে, যেখান থেকে অন্য জেলাগামী যানবাহনগুলোকে রাজধানীর প্রবেশমুখের আগে ডাইভার্ট করা যায়। স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান ফর ঢাকার (আরএসটিপি) আওতায় রাজধানীতে যানজট কমাতে পদ্মা সেতু থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বাইপাস হিসেবে রিং রোডের দক্ষিণ অংশের উন্নয়ন করা ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তবে এই সড়কটির নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। সরকার ১৩৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার নির্মাণে কাজ করছে। আর বাকি ৮৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক একটি সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার যানবাহন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সংখ্যা প্রতিদিন আনুমানিক ২৫ হাজারে উন্নীত হবে। ১০ বছরের মধ্যে তারা প্রতিদিন ৪৫ হাজারে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু এবং দুই পারের ৫২ কিলোমিটারসহ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কেরানীগঞ্জ এলাকা দিয়ে আউটার রিং রোডের যে প্রস্তাবনা রয়েছে, সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সেতুর কাক্সিক্ষত সুফল পাবেন না ঢাকাবাসী।’ তিনি বলেন, ‘আউটার রিং রোড হলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী মানুষ যার যার সুবিধা মতো রিং রোড ব্যবহার করে চলে যাবেন। ভেবে দেখুন, যে লোক উত্তরা যাবেন, তার পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বছিলা বা গাবতলী এলাকা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে সে এলাকায় চলে যেতে পারবেন। অন্যান্য এলাকার যাত্রীরাও একইভাবে রিং রোডের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। তাহলে ঢাকার যানজট কমবে এবং অল্প সময়ে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন।’ এ বিষয়ে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে মদনপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার বিদ্যমান অংশের উন্নয়ন করবে সওজ। আর এটি সরকারি অর্থায়নে করা হবে। এ ছাড়া মদনপুর থেকে কড্ডা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার সড়ক প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) মাধ্যমে কাজ চলছে। যা শেষ হতে আরও তিন বছর সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, নতুন ৩৬ কিলোমিটার রাস্তাটি জাপান সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে নির্মাণ করবে। প্রথমে কলাকান্দি থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে এবং বাকি অংশ পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হবে। আউটার রিং রোডের সামগ্রিক দক্ষিণ অংশে ভূমি মালিকদের জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণসহ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাজেটের মধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা নতুন রাস্তা এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হবে এবং সওজ ১২ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে। আর মদনপুর থেকে কড্ডা পর্যন্ত ব্যয় হবে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। যার কাজ ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আট লেনবিশিষ্ট এ সড়কের প্রস্থ হবে ২৪০ থেকে ৩০০ ফুট। এ অংশে দুটি রেস্ট এরিয়া, ৫টি ইন্টারচেঞ্জ, ৬টি ব্রিজ, ২০টি ওভারপাস এবং আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।