বুধবার, ১৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পি কের ১৫০ কোটি রুপি উদ্ধার আরও ১০ দিনের রিমান্ড

বললেন কয়েকটা দিন যেতে দিন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পি কের ১৫০ কোটি রুপি উদ্ধার আরও ১০ দিনের রিমান্ড

প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে আরও ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আদালত। পি কে হালদারের সঙ্গে অভিযুক্ত পাঁচজনকেও এ ১০ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে স্পেশাল (সিবিআই) কোর্ট। অন্যদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক নারীকে ১০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার আইনজীবী জানিয়েছেন, পি কে হালদারের থেকে ভারতীয় মুদ্রায় ১৫০ কোটি রুপির বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো খুলে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে গতকাল সকালে সংবাদকর্মীদের সামনে পি কে হালদার একটাই বাক্য বলেছেন, ‘কয়েকটা দিন যেতে দিন’।

তিন দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুর ১টার আগেই কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতের স্পেশাল (সিবিআই) কোর্ট-১-এর বিচারক মাসুক হোসেন খানের এজলাসে তোলা হয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের (ইডি) হাতে গ্রেফতার অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মিত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শারমিন হালদারকে। কঠোর পাহারায় তাদের রাখা হয় এজলাসের বাঁ কোণে। সবাইকেই তখন নির্লিপ্ত দেখাচ্ছিল। বিচারক আসার পর শুনানি শুরু হলে অভিযুক্তদের ফের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী। আদালতে তিনি জানান, অভিযুক্তদের আরও জিজ্ঞেসাবাদ করার প্রয়োজন আছে। অন্যদিকে এ মামলায় অভিযুক্ত আমানা সুলতানা ওরফে শারমিন হালদারকে ১০ দিনের জেল রিমান্ডের আবেদন জানায় ইডি। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আধা ঘণ্টার কিছু পরে ২টা নাগাদ বিচারক রায় দেন। সে ক্ষেত্রে ২৭ মে তাদের সবাইকেই ফের আদালতে তোলা হবে।

এদিন ইডির তরফে আদালতের কাছে আরও আবেদন ছিল- ‘ইডির রিমান্ডে নেওয়া পাঁচজনকে প্রতিদিন ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল চেকআপের জন্য বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে না নিয়ে, পরিবর্তে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারকে যেন সিজিও কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।’ এর কারণ হিসেবে আইনজীবী জানান, হাইপ্রোফাইল এ মামলার খবর সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই অফিস চত্বরে গণমাধ্যমকর্মী ভিড় করে থাকেন। তাতে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তাই তদন্তের স্বার্থে যেন এ অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তম মিত্র, স্বপন মিত্রদের আইনজীবী সেখ আলি হায়দার ও সোমনাথ ঘোষ আদালতে জানান, স্বপন মিত্রের থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপসহ কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তার চিকিৎসার দরকার। বিচারকও স্বপনের কাছ থেকে সেই সমস্যার কথা মনোযোগসহকারে শোনেন এবং মেডিকেল চেকআপের বিষয়টিতে আদালত সম্মতি জানায়। সে ক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থেই প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় একজন মেডিকেল অফিসার সিজিও কমপ্লেক্সে এসে তাদের মেডিকেল চেকআপ করবেন এবং নির্দিষ্ট ওষুধও দেওয়া হবে বলে জানান বিচারক। শুনানি শেষে অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, পি কে হালদারসহ সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একটি আইনেই মামলা হয়েছে। সেটি হলো ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২’। অর্থ পাচার সম্পর্কিত এ আইনের ৩ ও ৪ ধারায় মামলা হয়েছে গ্রেফতার ছয়জনের বিরুদ্ধে। আইনজীবীকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ প্রশস্ত করার জন্যই কি একটি মাত্র মামলা হলো? জবাবে অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, ‘এ মুহূর্তে এ বিষয়টিতে কোনো কিছুই বলা সম্ভব নয়। কারণ এটা সরকারের সঙ্গে সরকারের কথা হবে। একটা কথাই বলা যেতে পারে যে আইন আইনের পথে চলবে। উভয় দেশের সরকারের সমন্বয়ে এ আইন আসামিদের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হবে।’

ইডির আইনজীবী জানান, তারা তদন্তে সহায়তা করছেন। পি কে হালদারের থেকে ভারতীয় মুদ্রায় ১৫০ কোটি রুপির বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো খুলে দেখা হচ্ছে। সেগুলো তদন্তসাপেক্ষ। তিনি আরও জানান, এদের কাছ থেকে ভারতীয় আধার কার্ডসহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র, একাধিক দেশের পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয় বলেই জানান আইনজীবী।

ভাইয়ের দাবি পি কে হালদার চক্রান্তের শিকার : পি কে হালদার চক্রান্তের শিকার এবং তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার ভাই প্রাণেশ হালদার। এমনকি তাকেও ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রাণেশ। গতকাল সকালে আদালতে তোলার আগে ইডির আঞ্চলিক দফতর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে পি কে হালদার, প্রাণেশ হালদারদের আলাদাভাবে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে মেডিকেল চেকআপ করে ফের আলাদাভাবে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এ সময় গণমাধ্যমের কর্মীরা প্রশ্ন করলে প্রাণেশ বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’ তার অভিযোগ, বাংলাদেশের লোক আমাকে ফাঁসাচ্ছে। প্রাণেশের কাছে সেসব নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো আমি বুঝতে পারছি না। এর পেছনে রাজনৈতিক যোগ আছে কি না তা-ও জানি না।’ তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠা নিয়ে প্রাণেশ বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে নয়। আমি জানি না কোথা থেকে এসেছে। এর সত্যতা আমি নিজেও যাচাই করতে পারিনি। এ বিষয়ে অনুমান করে কিছু বলা যাবে না। আগে জানতে হবে এটা সত্য না মিথ্যা।’ তিনি জানান, পি কে হালদার সম্পর্কে তার দাদা। দাদা চক্রান্তের শিকার। যদিও এ ব্যাপারে এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে আদালতে যাওয়ার পথে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন পি কে হালদার। প্রাণেশের বক্তব্য নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে পি কে হালদার বলেন, ‘কয়েকটা দিন যেতে দিন’। আর তার এ মন্তব্য ঘিরেই তৈরি হয়েছে জল্পনা। এর আগে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের ১১ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০২ সালের ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ (পিএমএলএ)-এর অধীন গ্রেফতার পি কে হালদার ছাড়াও অন্যরা হলেন- প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মিত্র ওরফে স্বপন মিস্ত্রি, উত্তম মৈত্র ওরফে উত্তম মিস্ত্রি, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার ও আমানা সুলতানা ওরফে শারমিন হালদার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২’ অর্থাৎ অর্থ পাচার সম্পর্কিত এ আইনের ৩ ও ৪ ধারায় মামলা হয়েছে। বাংলাদেশে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। সে টাকা বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়টি পিএমএল আইনে একটি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত করা হয়েছে। পি কে হালদার নিজের নাম বদল করে শিবশংকর হালদার নামে ভারতে বসবাস করছিলেন। পি কে এবং তার সহযোগীরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ইস্যু করা রেশন কার্ড এবং ভারত সরকারের ইস্যু করা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড বানিয়ে ফেলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর