এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১২ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এদিকে পি কে হালদারকে ভারত থেকে ফেরাতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, পি কে হালদারকে ফেরাতে প্রয়োজনে ভারতে আন্তমন্ত্রণালয় টিম পাঠানো হবে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
দুদক সূত্র জানায়, গতকালের মামলার আসামিদের মধ্যে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ছাড়াও দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এম এ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুণ্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার ও এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার। এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে অবৈধ উপায়ে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে ঋণ হিসেবে ৪৪ কোটি টাকা গ্রহণ করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার বিবরণীতে বলা হয়েছে, দিয়া শিপিং লিমিটেডের এমডি শিব প্রসাদ ব্যানার্জি ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অপর আসামি মো. রাসেল শাহরিয়ার বরাবর ছয় বছরের জন্য ৪৪ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওই ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩২ ডেসিমেল জমি দেখান। ঋণ প্রস্তাব বোর্ডে অনুমোদনের জন্য ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপস্থাপন করেন রাসেল শাহরিয়ার। পরে ১৬৩তম বোর্ড সভায় ঋণ প্রদানের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ঋণ অনুমোদনের পর ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দিয়া শিপিং লিমিটেডের অনুকূলে ঋণ ছাড় করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা আত্মসাৎ করে পি কে হালদার সিন্ডিকেট। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ-এর তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলার অন্যতম আসামি রাসেল শাহরিয়ারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সব মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়। পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গতকালের মামলা নিয়ে মোট ৩৫টি মামলা করে দুদক। মামলার তদন্তকালে এখন পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের সহযোগী শঙ্খ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ১ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ৬৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। একই ইস্যুতে ৩৩ ব্যক্তির সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারি করা হয়েছে। গত শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করে দেশটির তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
পিকে হালদারের সব শেয়ার জব্দের নির্দেশ : দেশের আর্থিক খাত থেকে অর্থ পাচার করে ভারতে গ্রেফতার হওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সব ধরনের শেয়ার ফ্রিজ করার জন্য সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) নির্দেশ দিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
