সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

নানামুখী ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানামুখী ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বাংলাদেশের স্বার্থান্বেষী একটি মহলের অপতৎপরতার কারণে শ্রমবাজার চালু হওয়ার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে নেপাল ঢুকে পড়েছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে। প্রতিদিনই কাঠমান্ডু থেকে কর্মীদের নিয়ে কুয়ালালামপুরে যাচ্ছে ফ্লাইট। গত এক মাসে ২০ হাজার নেপালি কর্মী  গেছে মালয়েশিয়ায়। নেপালের পক্ষ থেকে ৫ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানোর টার্গেট নেওয়া হয়েছে। টার্গেট বাস্তবায়নে জোর পদক্ষেপে কাজ করছে নেপাল। কিন্তু বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ রাখতে নতুন করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর সফরের ঠিক আগমুহূর্তে বৈঠক ডেকে শ্রমবাজার নস্যাতের অপতৎপরতা করছে বিশেষ একটি মহল। এতে দেশের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন  হবে এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার পুরোপুরিই নেপালের হাতে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার চালু করার বিষয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। এ জন্য আগামী বুধবার মালয়েশিয়া মানবসম্পদ মন্ত্রী মহোদয় দাতুক সেরি সারাভানান তার প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসছেন। তারা ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ পরামর্শক সভা করবেন। এরপরই একটি সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, ঢাকায় দুই দেশের মন্ত্রীদের বৈঠকের পর গত ১৯ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কিন্তু এই বৈঠকের ঠিক আগে আগে নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতেছে বায়রার কিছুসংখ্যক সদস্য রিক্রুটিং এজেন্সি। তারা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে বন্ধ রাখার হীনউদ্দেশ্যে ৩ মে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে একটি মিটিং ডেকেছে। অভিযোগ উঠেছে, তথাকথিত সিন্ডিকেট বিরোধী ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য মালয়েশিয়ার মন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অসম্মান করে এবং মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটিকে খোলার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করা। কারণ এর আগে যখনই মালয়েশিয়ার কোনো টিম শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে ঢাকায় আয়োজিত মিটিংয়ে অংশ গ্রহণের জন্য সফর করেছে তখনই এই বিশেষ মহল মিটিং-মিছিল মানববন্ধন প্রভৃতি কর্মকান্ডের মাধ্যমে দুই সরকারের প্রচেষ্টা বানচাল করেছে। এবারের বৈঠকে তাদের ১৮তম অপপ্রচেষ্টার অংশ বিশেষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার অতিথিরা ঢাকায় আসার পর মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে তাদের অসম্মান করলে শুধুমাত্র নতুনভাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়া বন্ধ থাকবে না। সেই সঙ্গে ইতোমধ্যে যারা মালয়েশিয়ায় আছে তাদেরও ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দেবে। ফলশ্রুতিতে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককেও  দেশে ফিরে আসার মতো বিপদের সম্মুখীন হতে পারে দেশ। তাই এ ধরনের মিটিং-মিছিল বন্ধ করার দাবি করেছে বায়রার সদস্যদের বড় একটি অংশ। তারা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া দেশের স্বার্থে উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। সেখানে কর্মী পাঠানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সীমিত সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে, নাকি সব এজেন্সির মাধ্যমে বাজার উন্মুক্ত হবে সেটা মুখ্য বিবেচ্য বিষয় নয়। অভিবাসী কর্মীদের জন্য বাজার উন্মুক্ত হওয়া সবচেয়ে জরুরি। মালয়েশিয়ায় কর্মীদের বেতন মধ্যপ্রাচ্যসহ আরও অনেক দেশের তুলনায় বেশি হওয়ায় কোনোভাবেই উচ্চ বেতনের শ্রমবাজারটি হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। আর যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি কখনো মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করেনি, মালয়েশিয়া ব্যবসা সম্পর্কে ধারণাও নেই, তারা বুঝে না বুঝে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব/প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। দেশের স্বার্থে এবং অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তাদের এসব কাজ থেকে বিরত রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।

সর্বশেষ খবর