রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

থামছে না পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা

গোলাম রাব্বানী ও মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা থেকে

কুমিল্লায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি

প্রচারণায় আরফানুল হক রিফাত, মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার এখন তুঙ্গে। আরও নয় দিন প্রচার চালানো যাবে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ বাড়ছে নির্বাচনী মাঠে। গতকাল প্রচারণার নবম দিনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে ভোট চেয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। সেই সঙ্গে চলছে দুর্নীতি-মাদক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দুই প্রধান মেয়র প্রার্থীর বাগ্বিতণ্ডা আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।

গতকাল প্রচারে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, উন্নয়নের টাকা দিয়ে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর স্ত্রী কানাডায় বাড়ি করেছেন। সাক্কুর দুর্নীতি প্রমাণ করতে না পারলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণ দেন তিনি। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে কুমিল্লার জলাবদ্ধতা-যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দেন নৌকার মেয়র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সাবেক মেয়র ও এবারের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘এসব কথার ভিত্তি নেই। উনি প্রমাণ করবেন কী দিয়ে? প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কথা উনার বাহানা। উনি টেবিলঘড়ি প্রতীকের গণজোয়ার দেখে প্রলাপ বকছেন।’ জয়ী হলে যানজট-জলাবদ্ধতাসহ বাকি কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন এই প্রার্থী।

গতকাল দুপুর থেকে কুমিল্লা নগরীতে ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। এ অবস্থায়ও কথার উত্তাপ ছিল নির্বাচনী মাঠে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বিভিন্ন পথসভায় বলেন, ‘সাক্কু সাহেব যেখানে ডাকবেন সেখানেই যাব। সুধীসমাজসহ বসব। আমি প্রমাণ করে দেব তিনি দুর্নীতিবাজ। প্রমাণ না করতে পারলে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করব।’ বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘বিগত দুই মেয়াদে মেয়র ছিলাম। তখন কোনো কথা ওঠেনি। একটা মামলা হয়নি। এখন উনি প্রার্থী হওয়ায় কথা উঠে গেল! রিফাত পীর না সরকার? দেশে সরকার আছে, দুদক আছে। দুর্নীতি করলে তারা ব্যবস্থা নেবে।’ অন্য স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘একজন আরেকজনকে চোর বলেন। কেউ টাউন হলে ডাকেন। কেউ স্টেডিয়ামে ডাকেন। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে সন্ত্রাসের। তাই তারা গায়ের জোর দিয়ে কথা বলেন। এটা শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লার ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।’

প্রচারে কথার লড়াই : মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত গতকাল নগরীর চকবাজার, শাপলা মার্কেট, হাউজিং এস্টেট, পুরাতন চৌয়ারা, দয়াপুরে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এসব স্থানে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা নৌকার শহর। আপনারা দয়া করে আমাকে একবার সুযোগ দিন। আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে সে ভোট পাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কুমিল্লার সার্বিক উন্নয়ন কেউ করতে পারবেন না।’ তিনি নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে কুমিল্লার জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া সিটি কপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করা, মাদকমুক্ত শান্তির কুমিল্লা গড়তে ১১ দফা ঘোষণা করেন রিফাত। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কুমিল্লা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। আমি মাঠের মানুষ। সাক্কু জীবনেও খেলার মাঠে যাননি।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিলঘড়ির মনিরুল হক সাক্কু দিনভর নগরীর দৌলতপুর, শাকতলায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি আমার প্রতিশ্রুতির ৭০ ভাগ পূরণ করেছি। বরাদ্দ সংকটে সব কাজ করা যায়নি। এবার বড় প্রকল্প পাস হয়েছে। জয়ী হলে যানজট-জলাবদ্ধতাসহ বাকি কাজগুলো সমাধান করব।’ এ ছাড়া তিনি বস্তি এলাকায় যাদের থাকার ঘর নেই তাদের জমি থাকা সাপেক্ষে ঘর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি আর একটিবার সুযোগ চান।

মহানগরী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর, কাপ্তানবাজার, ইসলামপুর, পুরাতন চৌধুরীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘রিফাত ও সাক্কু দুজন একই নেতার লোক। তাঁরা কুমিল্লার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন। এসব লুটেরা এবার কালো টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের এবার কুমিল্লার মানুষ প্রতিহত করবে। ১৬ জুন সকালে কুমিল্লায় এক নতুন সূর্যের উদয় হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন কুমিল্লা গড়ে তোলা হবে। কোনো ব্যক্তি নয়, এটা হবে নিরাপদ ও সম্প্রীতির কুমিল্লা।’ তিনি নগরীর যানজট-জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনিও একবার সুযোগ চান। রিফাত ও সাক্কুর বাগ্যুদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন আরেকজনকে চোর বলেন। কেউ চোর, কেউ বড় চোর।’ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘আচরণবিধি ভঙ্গ করে মিছিল-শোডাউন করায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের লাটিম ও মিষ্টিকুমড়া প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থীদের থেকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর