মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হাসিনা না হলে দেশের হাল কে ধরতেন

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

হাসিনা না হলে দেশের হাল কে ধরতেন

পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গতকাল বলেছেন, বিশ্বের এমন অনেক দেশ আছে যেখানে পরিবারতন্ত্র এখনো চলছে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে বাংলাদেশের হাল কে ধরতেন?’

কলকাতার অভিজাত হোটেল ‘ওবেরয় গ্র্যান্ড’-এ ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ (ইস্ট) ২০২২ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইন্ডিয়া টুডে কনসাল্টিং এডিটর রাজদীপ সারদেশাই প্রশ্ন করেন, ‘বিজেপির পরবর্তী জাতীয় সংকল্প হলো পশ্চিমবঙ্গ এবং তেলেঙ্গানায় পরিবারতন্ত্রের নির্মূল করা। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?’ 

জবাবে মমতা বলেন, ‘আগে আমাদের জানতে হবে পরিবারতন্ত্র বিষয়টি কী। ভুলে গেলে চলবে না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, লেখক, চিত্রকর, গায়ক ছিলেন। তার পরিবারেরও অন্তত ১০০টা নাম বলতে পারি যারা এসব কাজে যুক্ত ছিলেন। এটা ভুলে গেলেও চলবে না যে বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে... বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর যদি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তবে কে দেশকে নেতৃত্ব দিত? সব ক্রীড়া ক্ষেত্রের শীর্ষ পদে তারা (বিজেপি) বসে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কারও সমালোচনা করছি না, এটা সৌজন্যবোধও নয়। আমি কারও নাম করছি না কিন্তু আমি জানি এমন অনেক শীর্ষস্থানীয় পরিবার আছে যেখানে... সেগুলো কি পরিবারতন্ত্র নয়?’ 

মমতার ভাতিজা লোকসভা সদস্য অভিষেক ব্যানার্জিকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অভিষেক জনগণের ভোটে নির্বাচিত। নতুন প্রজন্ম কি রাজনীতিতে আসা উচিত নয়? আমরা এক দিন চলে যাব, তারপর কে দেশকে পরিচালনা করবে? আমাদের নতুন প্রজন্ম দরকার। আমরা কি উত্তরপ্রদেশে রাজনৈতিক দল সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদবকে স্বাগত জানাব না? আমরা কি প্রশ্ন করব যে তিনি মুলায়ম সিং যাদবের ছেলে? কারণ মানুষ তাকে গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উদ্দেশ করে তার প্রশ্ন আপনার ছেলে যদি বিসিসিআই সচিব পদে বসতে পারে... সেখানে পরিবারতন্ত্র হয় না? কেবলমাত্র যারা রাজনীতিতে আসে, যারা রাস্তায় নেমে লড়াই করে তাদের বেলাতেই পরিবারতন্ত্রের প্রশ্ন উঠবে!’ প্রশ্ন মমতার।  নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, খারাপ লোকদের শোধরানো উচিত, কেন ওই খারাপ লোকগুলো ছড়ি ঘোরাবে? নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে অভিহিত করে মমতা বলেন, ‘আমি কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলাম, অনেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু মোদি সরকারের মতো এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ কেন্দ্রীয় সরকার দেখিনি।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ নিজে বলেছেন এবার তার লক্ষ্য বাংলা দখল। আপনারা অর্থের ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে বুলডোজ করতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে মানুষই বুলডোজার হয়ে দাঁড়াবে। আগামী নির্বাচন হবে বিজেপি বনাম মানুষের। আগামী দিনে মানুষই গণতান্ত্রিক উপায়ে ওদের বুলডজ করবে।’ ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চান কি না? সেই প্রশ্নের উত্তরে মমতা জানান, ‘তার কোনো কিছু হওয়ার ইচ্ছা নেই। তিনি বলেন, কখনো কখনো আমাদের আত্মত্যাগ করতে হয়। কখনো কখনো পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘণ্টা পরাতে হয়। আমি শুধু চাই গোটা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হোক। চাই ভারত ঐক্যবদ্ধ হোক।’

সর্বশেষ খবর