ভরা মৌসুমে ঢাকা ও বাইরের হাসপাতালে বাড়তে শুরু করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা। বছরের ছয় মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৯ জন। শুধু জুলাই মাসের ২৯ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪০৬ জন। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন আটজন। এর মধ্যে এ মাসেই সাতজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন এবং বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন ৩৩৬ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ২৫৪ জন এবং বাইরের হাসপাতালে ৮২ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৯৫ জন। জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন এবং জুন মাসে ৭৩৭ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। জুলাইতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪০৬ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আটজনে দাঁড়িয়েছে। এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকার, কক্সবাজার জেলায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে সাতজনই মারা গেছে জুলাই মাসে। জুন মাসে একজনের মৃত্যু হয়েছিল, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সেটাই ছিল প্রথম মৃত্যু। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বছরের এ সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। তাই জ্বর আসলে অবহেলা করা যাবে না। অনেকে করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছেন এ সময়। তাই জ্বর আসলে করোনা এবং ডেঙ্গু দুটোর জন্য আলাদা টেস্ট করাতে হবে। দুই রোগের ব্যবস্থাপত্র ভিন্ন। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। অবহেলা করলে ডেঙ্গু আক্রান্তে জীবন ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুদের সাবধানে রাখতে হবে।’
এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। সেই বছর ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, মারা যায় ১৪৮ জন। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করে ডেঙ্গু।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এডিস মশা নির্মূলে মাঠে নেমেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। লার্ভিসাইডিং, ফগিং, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, ড্রোন উড়িয়ে বহুতল ভবনের ছাদ বাগানে খোঁজা হচ্ছে মশার উৎস।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাসাবাড়ি ব্যালকনিতে, বারান্দায় কিংবা ছাদে যাওয়া কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। আমরা অত্যাধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে বাসা-বাড়ির ছাদে মশার উৎস আছে কিনা সেটি খুঁজে বের করছি। গত ২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ড্রোন অভিযানে ২২ হাজারের বেশি বাড়ি সার্ভে করা হয়েছে। ড্রোন একটি নতুন সংযোজন। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম সময়ে অনেক বাড়ি পরিদর্শন করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’
এডিস মশার নির্মূলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ভবনে লার্ভা পেলে জেল, জরিমানা, ভবন সিলগালা করাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত কার্যক্রম তদারকি করতে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।