বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ আওয়ামী লীগের

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না

রাজধানীতে গতকাল আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজপথ দখলে নিতে সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার আগেই গতকাল সাংগঠনিক শক্তির জানান দিল টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে দলের বিক্ষোভ মিছিল পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করে। রমনা থেকে মিছিলটি বের হয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। বিকাল ৪টায় মিছিল শুরু করার কথা থাকলেও বেলা ১টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে সমবেত হন। শাহবাগ, টিএসসি, হাই কোর্টের কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন এলাকা লোকারণ্যে পরিণত হয়। এতে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। তারা বলেন, এখন থেকে বিএনপি-জামায়াত যেখানেই ‘সন্ত্রাস-নাশকতা’ করবে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। দলটির নেতারা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে; আমরাও আজ থেকে মাঠে নামলাম। পেট্রোলবোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেব না। কাউকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারা বলেন, আপনারা প্রস্তুত তো? খেলা হবে। রাজপথে, আন্দোলনে, নির্বাচনে খেলা হবে। সেই খেলায় আমরাই জয়লাভ করব। বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারও ধরা খাবে। এ জন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে আবু আহমেদ মন্নাফী, এস এম মান্নান কচি, হুমায়ুন কবির, গোলাম আশরাফ তালুকদার প্রমুখ। ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্দুকের নলে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না, আন্দোলনেই আওয়ামী লীগের জন্ম। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক এই দলকে রুখতে হবে। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, জঙ্গিবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না। আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে এই দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারও ধরা খাবে।  দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রস্তুত তো? খেলা হবে। রাজপথে আন্দোলনে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, সেই খেলায় আমরাই জয়লাভ করব। এ জন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো দিন শ্রীলঙ্কা হবে না, পাকিস্তান হবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাবেন। তিনি জেগে আছেন, আমরা যেন ঘুমাতে পারি। মঞ্চে দলীয় নেতা-কর্মী বেশি বসায় বিরক্তি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, মঞ্চে এত নেতা? কোথা থেকে এলো এত নেতা? নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা দায়। সবাই নেতা। নেতারা কর্মীদের সঙ্গে বসবেন। নেতা একজন শেখ হাসিনা, আর আমরা সবাই কর্মী। বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) ভেবেছিল সিরিজ বোমা হামলার ভয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তারা তারেক-খালেদার পদক্ষেপের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছে। এই দেশ জঙ্গিবাদের নয়। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, সুখী-সমৃদ্ধ দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ এগিয়ে যাবে।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি দেশে জঙ্গিবাদ কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছিল। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা তাণ্ডব করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, আরেকবার বিএনপিকে ঘরে তুলব। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলা ভাইয়ের নেতা দণ্ডিত তারেক রহমান দেশকে অস্থিতিশীল করার স্বপ্ন দেখে। দেশে শান্তি বিঘ্নিত করতে চায়। মির্জা ফখরুল, কিছু করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতান্ত্রিক ও বাক-স্বাধীনতা আছে বলেই যা খুশি বলেন। কিন্তু শিষ্টাচারবহির্ভূত কিছু করলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথের সৈনিক।

আবদুর রহমান বলেন, তারা জানে না, আমরা এই মাটিতে জন্মেছি। পাঞ্জা ধরব, ওদের পরাজিত করে ছাড়ব। বিএনপি বলে ‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে আসবে না। শেখ হাসিনার অধীনে আসবে না’। কিন্তু আমরা আর কখনো অসাংবিধানিক পন্থা আনতে দিতে পারি না। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বিএনপি-জামায়াত বোমা হামলা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে চায়। আজ আমাদের শপথ নিতে হবে। যেখানেই বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগকে হুমকি দেবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আজকের একটা নমুনা দেখালাম। এরপর বিএনপি-জামায়াতকে বঙ্গোপসাগরে ফেলব।

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এই অপশক্তিকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে। যতদিন আমরা তা করতে পারব না ততদিন আমাদের রাজনীতিতে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে না।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। সেই বাংলাদেশকে আজকে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান বানাতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ তা হতে দেবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিরোধ করব। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে। আমরাও আজ থেকে মাঠে নামলাম। পেট্রোলবোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেব না। কাউকে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেব না। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশের কোথাও সন্ত্রাস করতে দেব না। আজ আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। আমরা প্রস্তুত। ঢাকা তো দূরের কথা বাংলাদেশের যেখানে অন্যায় হবে সেখানেই প্রতিবাদ হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করব এটাই আমাদের অঙ্গীকার। সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, রাজপথ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। আমরা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি বলেই বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছি, এর মানে দুর্বলতা ভাববেন না। আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আন্দোলন কত প্রকার, কী কী তা আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে। কীভাবে সন্ত্রাসীদের দমাতে হয় তাও আমরা জানি। সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, এই রাজপথ সন্ত্রাসীদের নয়। এই রাজপথ জনগণের। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথ দখলে নিতে দেওয়া হবে না। সমাবেশে আসতে থাকা মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতে শুরু করে শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন থে?কে কাকরাইল। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল আকারে নেতা-কর্মীদের ভিড়ে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিছিল ও যানবাহনের কারণে সেগুনবাগিচা, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও শিল্পকলা এলাকার অলি-গলি পর্যন্ত যানটজের সৃষ্টি হয়। সোয়া ৫টায় সমাবেশ শেষ হলে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা-প্রেস ক্লাব ও জিরোপয়েন্ট হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা- ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। সারা দেশে জেলা ও উপজেলাগুলোতেও অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর