রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

উত্তাল বঙ্গোপসাগর নিখোঁজ ৪০০ জেলে

প্রতিদিন ডেস্ক

উত্তাল বঙ্গোপসাগর থেকে ৪১ মাছধরা ট্রলারসহ ৪০০ জেলে নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ট্রলার, এর মালিক ও জেলেদের নাম জানা যায়নি।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম মিয়া জানান, কয়েকদিন আগে একটি নিম্নচাপ শেষ হয়েছে, এর পরেই উপকূলের  জেলেরা তাদের ট্রলারে রসদ সামগ্রী নিয়ে মাছ শিকারের জন্য গভীর সমুদ্রে রওনা দেয়। আবারও নিম্নচাপ শুরু হলে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত পাথরঘাটা উপজেলায় ৩০টি এবং মহিপুরে ১১টি মাছধরা ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। বিষয়টি কোস্টগার্ডসহ সরকারি দফতরগুলোকে জানানো হয়েছে এবং বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ  থেকে জেলেদের সন্ধানে বেশ কয়েকটি ট্রলার উদ্ধার অভিযানে কাজ করে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেরা সমুদ্রে ডুবে যেতে পারে। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কেএম সাফিউল কিঞ্জল গণমাধ্যমকে জানান, গত দুদিন ধরে নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় অনেক ট্রলারডুবি ও নিখোঁজের ঘটনা শুনেছি। সর্বশেষ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে পাথরঘাটা, হাতিয়া, চরফ্যাশন, নিজামপুর, পায়রা পোর্টসহ মোট ৬টি টিম গভীর সমুদ্রে জেলেদের উদ্ধার অভিযানে রয়েছে এবং গতকালও ছিল। আবার গতকাল সকাল ৮টা থেকে এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে, যা সারা দিন চলমান থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রলার মালিক সমিতি থেকে বলা হয়েছে ৪১টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে, তবে আমরা কাজ করছি ট্রলারের নাম সংগ্রহ করার। আমাদের কাছে নাম আসছে। তবে এ পর্যন্ত মোট ১৮২ জন নিখোঁজ জেলের সংখ্যা হাতে এসেছে।’

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পটুয়াখালী : নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে মৎস্য বন্দরে ফেরার পথে পটুয়াখালীর ডুবে যাওয়া ও নিখোঁজ ট্রলারের জেলেদের মধ্যে ভারতের রায় দিঘীতে ১১ ও সুন্দরবনে ১৩ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিজামপুর কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার সেলিম মণ্ডল জানান, পটুয়াখালীর ৮টি মাছধরা ট্রলার ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন জেলে। এছাড়া  যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৭টি ট্রলার। এর মধ্যে ভারতের রায় দীঘি এলাকায় ১১ জেলেকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌ-বাহিনী সদস্যরা। এছাড়াও নিখোঁজ ও ডুবে যাওয়া ট্রলারের ১৩ জন জেলে সুন্দরবন এলাকায় অবস্থান করছে বলে আমাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য রয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এদিকে নিখোঁজ হওয়া জেলেদের ভাগ্যে কি ঘটেছে,  কোথায় তারা আছে, কোনো হদিস মিলছে না। এ নিয়ে উপকূলের জেলে পল্লীতে স্বজনদের কান্নার রোল আহাজারিতে শিববাড়িয়া নদীর দুই পাড়ে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য বন্দর এলাকা ভারি হয়ে উঠেছে। উদ্ধারকৃত কয়েকজন জেলেকে অন্য ট্রলারে মহিপুর বন্দরে নিয়ে এলে তাদেরকে মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে  গেলেও নিম্নচাপের প্রভাবে দ্রুত ফিরে ১৫ দিন ধরে উপকূলের আশ্রয় থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হলে মাত্র তিন দিন আগে সাগরে যাওয়ার পর ফের শুরু হয় বৈরি আবহাওয়া। ঘোষণা করা হয় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত। এতে আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক জেলেসহ অসংখ্য মাছ ধরা ট্রলার। মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা বলেন, নিখোঁজের সঠিক তথ্য বলা যাচ্ছে না। কারণ বেশ কিছু ট্রলার জেলেদের নিয়ে বন্দরে ফিরে আসছে বলে জেনেছি, আবার কিছু  ট্রলারের খবর পাওয়া যাচ্ছে না, বা ট্রলারের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য হলো, আমাদের এখানকার ১১টি ট্রলার ডুবে গেছে ও ২৭টি ট্রলার নিখোঁজ আছে। এসব ট্রলারে কমপক্ষে চার শতাধিক জেলে ছিল।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাস্টার জানিয়েছেন, হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে এ পর্যন্ত ৪১টি ট্রলার নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। আমরা নিখোঁজদের স্বজন এবং ট্রলার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

চরফ্যাশন (ভোলা) : চরফ্যাশনের উপকূলে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে অন্তত: ১৩ ফিশিং ট্রলার নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে শুক্রবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। এখানকার ৯ ট্রলারসহ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৬০ জেলে।

 

 

সর্বশেষ খবর