শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

হামলা চালিয়ে ছাত্র অধিকারের অনুষ্ঠান পন্ড করল ছাত্রলীগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

হামলা চালিয়ে ছাত্র অধিকারের অনুষ্ঠান পন্ড করল ছাত্রলীগ

বুয়েট ছাত্র আবরারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র অধিকারের স্মরণসভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভা ছাত্রলীগের হামলায় পন্ড হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত ওই স্মরণসভায় হামলার পর আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। দুই দফা হামলায় ২০ জন আহত হয়েছেন বলে ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আকরাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনসহ ২২ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ‘আবরার

ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’-এর ব্যানারে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনটি মূলত ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা পরিচালনা করেন। কর্মসূচির শুরুতেই ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কর্মসূচিতে আসা নেতা-কর্মীদের পরিচয় ও বহিরাগত আছে কি না জানতে চান। এ নিয়ে বাগ্বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীনসহ কয়েকজনের সঙ্গে ছাত্র অধিকার নেতা-কর্মীদের মারামারি শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা নেতা-কর্মীদের লাঠিসোঁটা ও লোহার পাইপ দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। পরে জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনের নেতৃত্বে পরিষদ নেতা-কর্মীদের শাহবাগমুখী রাস্তায় ধাওয়া দেওয়া হয়। এ সময় উভয় পক্ষে ইটপাটকেল বিনিময় হয়। হামলার সময় কর্মসূচির মাইক বহনকারী রিকশাচালককে মারধর, বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানারে আগুন দেয় ছাত্রলীগ। আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ অন্যরা আহতদের হাসপাতালে নিয়ে এলে সেখানেও তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় পুলিশ ১৫-১৬ জনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজু ভাস্কর্যে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে আয়োজিত স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের ১০-১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হলে তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ছাত্রলীগ সেখানেও আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হই। ছাত্রলীগ আমাদের আটকে রাখলে পুলিশ এসে আমাদের ঢাবি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ১৫ জনকে শাহবাগ থানা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।’ এ ঘটনায় সাতজন গুরুতরসহ মোট ২৪ জন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, ‘আবরার স্মৃতি সংসদ নামের একটি সংগঠনের আড়ালে তারা শিবিরসহ নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রোগ্রাম করছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে গেলে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের কাছে দেশি অস্ত্র ছিল। ইতোমধ্যে পুলিশ তাদের অনেককেই আটক করেছে।’ বিষয়টি নিয়ে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ যদি কোনো অভিযোগ দেয় তাহলে মামলা হবে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় আহতদের দেখতে রাতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা। রাত ১১টায় তারা হাসপাতালে যান বলে জানান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। এসময় সহসভাপতি মুতাছিম বিল্লাহ, মো. কামরুজ্জামান আসাদ, ঝলক মিয়া, সাইফুল ইসলাম সিয়াম, যুগ্মসম্পাদক জহির রায়হান আহমেদ, আশিক আহমেদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সঙ্গে ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর