জন্মের পর দেওয়া নিবন্ধন নম্বরকে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর হিসেবে বিবেচনার বিধান রেখে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে এ আইনটির খসড়া আরও রিভিউ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি কার্যকর হলে এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে চলে আসবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন থেকে জন্মের পরপর সবার নিবন্ধন হবে। নিবন্ধনের সময় দেওয়া ইউনিক নম্বরই জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর হবে। বিদ্যমান আইনটি ২০১০ সালের। এনআইডি কার্যক্রম বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কাছে আছে। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এটি সরকারের কাছে নিয়ে আসা হবে। নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার আইডি নিয়ে শুরু হলেও পরে এনআইডি হিসেবে রূপান্তর হয়। তখন ব্যাসিক কনসেপ্ট ছিল নির্বাচনসংক্রান্ত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এটি (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা। কারণ নির্বাচন কমিশন সব ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। সেজন্য এটি সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা পাসপোর্ট হ্যান্ডল করে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন আলটিমেটলি একটা ইউনিক আইডিতে চলে যাচ্ছে।
আজ (গতকাল) মন্ত্রিসভা বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। আমি ওই জাতীয় কমিটির সভাপতি, সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে- জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যে রেজিস্ট্রেশন হবে, তখন যে নম্বর দেওয়া হবে, আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর পর ওই নম্বরটাই সব জায়গায় যাবে। সেজন্য পাসপোর্টের সঙ্গে একটু সিনক্রোনাইজ করে জন্মের সময় নম্বরটা দিয়ে দেওয়া হবে। আগামীতে যারা জন্ম নেবে তাদের জন্য। তিন-চার বছর পর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের দৃষ্টি, মুখচ্ছবি সব দিয়ে দেওয়া হবে। পরে এর মডিফিকেশন হবে। এজন্য এটি সুরক্ষা সেবা বিভাগে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে এ আইনটি একটু রিভিউ করা দরকার বলেও মনে করছে মন্ত্রিসভা। রিভিউর কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আগের আইনে ৩২টি ধারা ছিল, কমিয়ে ১৫টি করা হয়েছে। অনেক ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সেগুলোয় মন্ত্রিসভা সম্মত হয়নি। বলেছে এটাকে রিভিউ করার জন্য। উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ছয় বা সাতটি অপরাধের জন্য আলাদা দণ্ড ছিল। এ আইনে সব একসঙ্গে করে সাজা সাত বছর কারাদণ্ড করা হয়েছে। ছোট অপরাধের জন্য তো সাত বছরের কারাদণ্ড হবে না। সেজন্য এগুলোকে আলাদা করে রেখে দিতে হবে। আরও কিছু বিষয় ছিল। যেমন অন্যান্য কাজেও এনআইডি ব্যবহার করা যাবে। এ ধারাগুলো নতুন খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেজন্য মন্ত্রিসভা বলেছে এগুলো পর্যালোচনা করে আগের যে ৩২টি ধারা ছিল সেখান থেকে দু-একটি বাদ বা যোগ করে ঠিক করে নিতে। এটা নিয়ে লেজিসলেটিভ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে আমাদের (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) সঙ্গেও কথা বলে এটাকে যথাসম্ভব ওই ৩২টি ধারার মতো আইন নিয়ে আসবে।
গুরুত্ব বাড়ল জাতীয় বীমা দিবসের : সাধারণ মানুষের মধ্যে বীমা বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা আনার লক্ষ্যে দিবসটিকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণির দিবস হিসেবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জারি করা পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মিথেন গ্যাস কমাতে সম্মত বাংলাদেশ : বৈশ্বিক মিথেন অঙ্গীকারে বাংলাদেশের যোগদানের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে মিথেন গ্যাস কমাতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সারা বিশ্বের পরিবেশবিদরা মুভ (আন্দোলন) করছেন। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব ধ্বংসের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। ৬ ডিগ্রি যদি বাড়ে তাহলে তো কিছুই করার থাকবে না। ৪ ডিগ্রিও যদি বাড়ে, সে ক্ষেত্রেও প্রায় ৮০ শতাংশ এরিয়া চলে যাবে। ২ ডিগ্রি ইনক্রিজ হলেও লো লাইন এরিয়াগুলো সমুদ্রের নিচে চলে যাবে এবং ব্যাপক ন্যাচারাল ডিজাস্টার হবে। এখন চেষ্টা করা হচ্ছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখা সম্ভব কি না। এজন্য একটা পদ্ধতি হলো, মিথেন গ্যাস কমাতে হবে বিশ্ব থেকে। তাপমাত্রা বাড়ার জন্য অনেক বিষয় জড়িত। মিথেন একাই পয়েন্ট ৩ বাড়াতে পারে। ৫০টি দেশ এরই মধ্যে সই করেছে। মানবসৃষ্ট মিথেন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাতে বাংলাদেশ এগ্রি (সমর্থন) করেছে।’
বাংলাদেশ-ব্রুনাইর মধ্যে সরাসরি বিমান চলবে : বাংলাদেশ ও ব্রুনাইর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচলসংক্রান্ত চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলের পথ খুলছে।