বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসির ভরসা সিসি ক্যামেরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসির ভরসা সিসি ক্যামেরায়

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভরসা। ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর পৌরসভা, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সুফল পেয়েই গাইবাবন্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে ইসি। ঢাকায় বসেই গাইবান্ধা নির্বাচনের সব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। ক্যামেরায় ভোটের অনিয়ম দেখে দুপুর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করেন তাঁরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুরো নির্বাচনই বন্ধ করে দেয় সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। সিসি ক্যামেরার বদৌলতে এ নির্বাচন বন্ধ করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইসি। একই ধারাবাহিকতায় জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বসেই পুরো ভোট মনিটরিং করেন সিইসিসহ পুরো কমিশন। গতকাল চার পৌরসভা নির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় ভোট মনিটরিং করে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ঘোষণা দিয়েছেন আগামীতে সব নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের। তিনি বলেন, ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে। গতকাল দেশের চার পৌরসভার ভোট সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করে কোনো ‘অনিয়ম দেখেননি’ বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, সিসিটিভির কারণে এবারের ভোটে ‘পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা’ দেখতে পাচ্ছেন। গতকাল সকাল ৮টা থেকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, জামালপুরের হাজরাবাড়ী, দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। গত কয়েকটি নির্বাচনের মতো এবারও ঢাকা থেকে সিসি ক্যামেরায় নজর রাখছে ইসি। আগামীতে ফরিপুর-২ আসনের নির্বাচন, রংপুর সিটিসহ অন্যান্য সিটি ভোটে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশনের পঞ্চম তলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে ভোটের পরিস্থিতি দেখছিলেন। এর মধ্যে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যে পর্যবেক্ষণটা করছি, আমাদের চোখে কোনো অনিয়ম ধরা পড়েনি। সুশৃঙ্খলভাবে ভোটারদের কেন্দ্রের বাইরে এবং ভিতরে অপেক্ষমাণ দেখছি। কেন্দ্রের ভিতরে ভোটকক্ষে নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করেই সবাই ভোট দিচ্ছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কী এসেছে, সে বিষয়ে “যথাসময়ে” গণমাধ্যমকে জানানো হবে। আমরা তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি এটা সত্য। রিপোর্ট নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি এবং আমরা বসতে পারিনি। তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে আপনাদের যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সেই কমিটি ২৭ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

সিসি ক্যামেরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এনেছে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে আমরা কেমন ফল পেয়েছি। সিসি ক্যামেরা প্রতিটি প্রক্রিয়ার মধ্যে কতটা স্বচ্ছতা এনেছে, সঠিকতা এনেছে। আমরা ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর পৌরসভা, কুমিল্লা সিটি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। আমরা চিন্তা করেছি সব পৌরসভা নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করব।’ তিনি বলেন, ‘যদি কারও অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তারা কিন্তু সিসি ক্যামেরা অ্যাভয়েড করে। সিসি ক্যামেরা, যারা দুষ্কৃতকারী ও সঠিকতায় বিশ্বাস করে না, তাদের শত্রু হিসেবে কাজ করে। আর যারা ভালো তাদের মিত্র হিসেবে কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলেছি বাজেট প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করব। অতীতে যেমন সুফল পেয়েছি ভবিষ্যতেও পেতে চাই। আমরা এখানে পরীক্ষা দিতে আসিনি। ভালো নির্বাচন উপহার দিতে চাই।’

রংপুরসহ সব সিটি ভোটে থাকবে সিসি ক্যামেরা : রংপুর সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আজ বেলা ১১টায় ইসির নবম সভায় ভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সভার আলোচ্যসূচিতে রংপুর সিটির সাধারণ নির্বাচন; স্থানীয় সরকারের অন্যান্য ও উপনির্বাচন; আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির সুপারিশ উপস্থাপন; বিভিন্ন বকেয়া বিল ও বিবিধ বিষয় রয়েছে। রংপুর সিটি ভোটের বিষয়ে রবিবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুর দিকে রংপুর সিটি করপোরেশন ভোট হতে পারে। এ নির্বাচনে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। রংপুরে ইভিএম ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সেটা কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এখনই বলা যাবে না। তবে কমিশনের এগুলো ব্যবহারের একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। সিসি ক্যামেরা ও ইভিএম ব্যবহারে অনেকেরই আপত্তি আছে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা কার আপত্তি আছে কি নেই সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমরা ভাবছি কী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে যতগুলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে সেখানে আমরা ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর