বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বেদনার নম্বর এখন ৫

ভারতের বিরুদ্ধে শেষ বলে হার

মেজবাহ্-উল-হক

বেদনার নম্বর এখন ৫

ইস্! বৃষ্টিটা যদি আর কিছুক্ষণ স্থায়ী হতো। লিটন দাস যদি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রানআউট না হতেন! যদি ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে নুরুল হাসান সোহানকে আর একটু ওপরে নামানো যেত!

-কত কিছুই না হতে পারত! কিন্তু এসব কিছুই হয়নি। আবারও আফসোস!  আবারও জয় হাতছাড়া বাংলাদেশের। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার পর ভারতের বিরুদ্ধে মাত্র ৫ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। ৫ এখন সাকিবদের বেদনার নম্বর।

বৃথাই গেল লিটন দাসের লড়াই। তার ২৭ বলে খেলা ৬০ রানের ইনিংসটি ভারতের ভিত কাঁপিয়ে দিলেও বাংলাদেশকে জেতাতে পারেনি।

তাসকিন আহমেদের ক্যারিশম্যাটিক বোলিংয়ের পরও প্রথমে ব্যাট করে বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের হাফ সেঞ্চুরিতে ভারত ১৮৪ রান করে। বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ৭ ওভারে ৬৬ রান করার পর বৃষ্টি শুরু হয়। ডার্কওয়াথ/লুইস পদ্ধতি অনুযায়ী তখন ১৭ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দ্রুত অ্যাডিলেডের আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। বৃষ্টির পর যখন পুনরায় খেলা শুরু হয় তখন বাংলাদেশের টার্গেট হয়ে যায় ১৬ ওভারে ১৫১ রান। অর্থাৎ পরের ৯ ওভার থেকে রান দরকার ছিল ৮৫। কিন্তু বাংলাদেশ ৮০ রানের বেশি করতে পারেনি। বৃষ্টি আইনে ৫ রানে জিতে সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল ভারত।

যে অ্যাডিলেডে ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে জিতে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ, সুখস্মৃতির সেই অ্যাডিলেডের মঞ্চে এবার চিত্রায়িত হলো বিরহ গাঁথা। টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে অর্থাৎ বছর ছয়েক আগে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শেষ বলে হেরেছিলেন টাইগাররা। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ একটা সুযোগ ছিল সাকিবদের সামনে। কিন্তু হলো না। আবারও শেষ বলেই ভাগ্য কাটা পড়ে গেল লাল-সবুজদের। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচটি শেষ বল পর্যন্ত ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। মুহূর্তে মুহূর্তে ম্যাচের ভাগ্য বদলে গেছে। কখনো বাংলাদেশের দিকে আবার কখনো ভারতের দিকে। প্রথমে ব্যাট করে ভারত বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের টার্গেট দেয়। ব্যাটিং বর্থতায় ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে তখন হয়তো অনেকেই হতাশ ছিলেন।। কিন্তু বাইশগজে গিয়েই লিটন দাস পরিস্থিতি পাল্টে দেন। এই আসরে প্রথমবারের মতো ইনিংস ওপেন করতে নেমে অ্যাডিলেডের বাইশগজে ঝড় তোলেন।  প্রথম ৭ ওভারে ৬৬ রান তোলে বাংলাদেশ। এর মধ্যে লিটন একাই করেছিলেন ৫৯ রান। কিন্তু বৃষ্টির পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অন্যপ্রান্তের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ‘রানআউট’ লিটন। এরপরও দারুণ সুযোগ ছিল টাইগারদের সামনে। কিন্তু মিডল অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান একদমই সুবিধা করতে পারেননি। সাকিব আল হাসান ১৩ রানে আউট হয়ে যান। আর আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী ও মোসাদ্দেক হোসেন নিজেদের স্কোরকে ডাবল ফিগারেই নিয়ে যেতে পারেননি। তবে শেষ দিকে লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ জুটি। মাত্র ১৯ বলে তারা ৩৭ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ গড়েন। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২০ রান। ভারতীয় বোলার আর্শদ্বীপের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে সোহানকে স্ট্রাইক দেন তাসকিন। পরের বলেই ছক্কা। শেষ চার বলে দরকার ১৩। এমন সময় একটি ডট। অর্থাৎ সিঙ্গেল হতো, কিন্তু নেননি সোহান। পরের বলে দুই রান। পঞ্চম বলে আবারও বাউন্ডারি। শেষ বলে ছক্কা হলে ম্যাচ টাই হয়ে যেত। কিন্তু টেনশনে আর পারলেন না সোহান। তবে তাসকিনকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত তার লড়াইটা ছিল দেখার মতো। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমরা যখনই ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলি সেখানে দারুণ একটি গল্প তৈরি হয়। সবকিছুই দুর্দান্ত হয়েছে। আমরা কেবল জয়টাই পাইনি। শেষ পর্যন্ত কেউ জিতবে কেউ হারবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য দুর্দান্ত। দারুণ উপভোগ করছি।’ ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘খুবই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা নার্ভ ধরে রেখেছি। এটা খুবই শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ ছিল।’ সবকিছুর পরে মনে রাখার মতো বিষয় হচ্ছে ‘রোমাঞ্চকর লড়াই’। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই এখন টান টান উত্তেজনা। ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ’ নামে বড় হলেও এখন আর লড়াই জমে না। অথচ টি-২০ বিশ্বকাপে ‘বাংলাদেশ-ভারত’ শেষ দুটি ম্যাচই নিষ্পত্তি হলো শেষ বলে। যদিও দুটিতেই হার টাইগারদের। তারপরও দুইবারই ভারতীয়দের কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল বাঙালিরা, সেটাই বা কম কিসে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর