বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

শর্ত মেনেই আইএমএফের ঋণ

মানিক মুনতাসির

শর্ত মেনেই আইএমএফের ঋণ

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করা হবে আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনেই। রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বর করা হবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজেট ভর্তুকিসহ জ্বালানি খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হবে। এসব শর্ত মেনেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি প্রধান রাহুল আনন্দ। ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে এসব ইস্যুতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ আলোচনা চলবে। আমরা ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করছি। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় ও বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকট সামলাতে সংস্থাটি ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে।’ অর্থ বিভাগ সূত্র জানান, সংস্থাটি কেন্দ্রীয় ব্যাাংকের স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই বলে আসছে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি স্বাধীন সংস্থা হলেও স্বাধীনভাবেই অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায়, ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, মূল্যায়নের ব্যাপারে সরকার ও বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসছে। এতে উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। ব্যাংক খাতে সুদহার নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রানীতি, সরকারি ব্যাংকে হস্তক্ষেপসহ নানাভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে আইএমএফ।

আইএমএফ মনে করে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার নিয়ন্ত্রণ করলেও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা করতে পারে না। এমনকি সরকারের নির্দেশে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইভাবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা করতে পারছে না। এখানে আপত্তি জানিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য সবুজ সংকেত দিয়েছে- ঋণ ও আমানতের বেঁধে দেওয়া সুদহারের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

এদিকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কী ধরনের কর অব্যাহতি বা ছাড় দেয় এবং এসবের যৌক্তিকতা বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আর করকাঠামো আধুনিকায়ন ও আর্থিক খাতের সংস্কারের বিষয়ে এনবিআর যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর বিষয়েও নতুন ব্যাখ্যা চেয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা আরও হবে। আমাদের প্রত্যাশিত ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’ এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুন-২০২২ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা; যা বিতরিত ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ছয় মাস আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলে ছয় মাসের ব্যবধানেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকায়। চলতি বছরের ২৪ জুলাই ব্যালান্স অব পেমেন্ট, বাজেট সহায়তা ও অবকাঠামো খাতের জন্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি দেয় সরকার। এ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসেছে। ৯ নভেম্বর পর্যন্ত তারা ঢাকায় অবস্থান করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর