শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে ফের জেলে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে ফের জেলে : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তবে খালেদা জিয়াকে আবারও কারাগারে পাঠিয়ে দেব। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কোনো কথা নেই। কিন্তু একটা মানুষের গায়ে হাত দিলে ছাড়ব না।

গতকাল ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।  

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছরের জেলের বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ ও সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বিএনপির প্রিয় লোক ছিল। তাদের দেওয়া মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছিল। হ্যাঁ, অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ,  তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছে, আবেদন করেছেন, আমরা তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার সুযোগটা দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করলে, যদি ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করে, বিএনপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব।  তিনি বলেন, অবৈধ সরকার, ক্ষমতা দখলকারীর দ্বারা গঠিত অবৈধ দলগুলো আজকে খুবই লাফালাফি করে, খুব ভালো কথা। আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণ মিছিল, মিটিং কর, আমরা কিছুই করব না। কিন্তু ওই যে লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে ভাবসাব দেখানো, আর যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয়, আমরা ছাড়ব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জামান কবিতা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকারের গত সাড়ে ১৩ বছরের দেশের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কথা জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সামনে নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করে এবং দেশের উন্নয়ন করেই নৌকার পক্ষে ভোট আনব। দেশের মানুষ আর সেই অশান্ত পরিবেশ চায় না, শান্তির পরিবেশ চায়, দেশের উন্নতি চায়। তাই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকেই চায়, কেননা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে দেশে শান্তি, উন্নয়ন আর অগ্রগতি। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির অপতৎপতার সমালোচনা করে বলেন, দেশের জনগণ কি একটু ভেবে দেখেছে এই লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীরা (বিএনপি-জামায়াত) ক্ষমতায় আসলে দেশের অবস্থা কী হবে? করোনা মহামারিসহ দুঃসময়ে বিএনপির অস্তিত্ব কোথায় ছিল? তারা তো জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। বিএনপি যে এত লম্ফঝম্প করছে আর স্বপ্ন দেখছে জনগণ ভোট দিয়ে ভরে দেবে- এত সহজ নয়। দেশের জনগণ কি বিএনপির শাসনামলের হাওয়া ভবন, দুঃশাসন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি, লুটপাট, নির্যাতনের কথা ভুলে যাবে? ভুলবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দলের জন্মই সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে (জিয়াউর রহমান), সেই দল গণতন্ত্র উদ্ধারের কথা বলে কোন মুখে? আবার অনেকে তাদের সঙ্গে তাল মেলায়। কিন্তু আমার প্রশ্ন- বিএনপির নেতৃত্ব কই? বিএনপি নেতাদের বলুন- তাদের নেতা কে? এতিমের টাকা আত্মসাৎ মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। আর মামলা আমরা দেইনি, খালেদা জিয়ার প্রিয় কাছের মানুষ ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনরা দিয়েছেন। এই ফখরুদ্দীন আহমদকে খালেদা জিয়া বিশ্বব্যাংক থেকে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করেছিলেন। জেনারেল মঈন উদ্দিনকে নয়জন সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করেছিলেন। তাঁর প্রিয় মানুষরাই মামলা দিয়েছে, আদালতে প্রমাণের পর সাজা হয়েছে। তিনি বলেন, হাওয়া ভবনের পাওনা না মিটিয়ে দেশে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। কেউ ব্যবসা করতে পারেনি। এক ভাগ হাওয়া ভবনে, আরেক ভাগ পিএমওতে তৈরি ব্যক্তিগত উন্নয়নের উইংয়ে দিতে হতো। ব্যবসায়ীদের দুই ভাগ দিয়েই তবে ব্যবসা করতে হতো।  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। বিএনপি এত লম্ফঝম্প করছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে সাড়ে ৩ হাজার মানুষকে দগ্ধ করেছে, শত শত মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কেন দেশের জনগণ তাদের পাশে থাকবে?

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া জড়িত, খালেদা জানতেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এটা জানতেন- সে বিষয়ে নানা উপাত্ত অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার খুনিদের জিয়াউর রহমান বিদেশে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করলেও ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের বের করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া খুনি খায়রুজ্জামানকে, যে ৩ নভেম্বর জেলহত্যায়ও জড়িত তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি ও প্রমোশন দেয় এবং মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করেও পাঠায়। খুনি পাশাকে বিদেশে মৃত অবস্থায় প্রমোশন দেয় এবং তার ভাতা ও সব ধরনের বেনিফিট পরিবারকে দেয়। তাহলে কী করে অস্বীকার করবে এই হতাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত নয়। তিনি বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির  নির্বাচনে খুনি রশিদকে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বসানোর মাধ্যমে খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া যে সম্পূর্ণভাবে জড়িত তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সংসদে এ নিয়ে আওয়ামী লীগকে আলোচনা করতে দেওয়া হয়নি। উল্টো খালেদা জিয়া বলল তিনি  (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। অর্থাৎ এক অপরাধ করে, পরে সেই অপরাধটা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর ট্রিকসটা তারা ভালোভাবেই জানেন। শেখ হাসিনা বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা যায় না। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। গণভবন থেকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই যেন ঢুকতে দেওয়া হয়। জেলার তাদের ঢুকতে না দিলে তাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

জাতির পিতার খুনি মোশতাক-জিয়ারাই জেলহত্যা ঘটিয়েছিল : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার হত্যাকারী মোশতাক, জিয়াউর রহমান। এরাই জেলহত্যা ঘটিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়টাকেও নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। এ কারণে জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে যারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তাদের হত্যা করা হয়েছিল। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২০তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন- আওয়ামী লীগের প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা বেনজীর আহমদ, তানভীর শাকিল জয়, নাহিদ ইজহার, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর