রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আগামী মাস থেকে হয়তো জ্বালানি কষ্ট থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী মাস থেকে হয়তো জ্বালানি কষ্ট থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয় সারা বিশ্বই করছে। আমরাও করেছি। হয়তো একটু কষ্ট হয়েছে। আগামী মাস থেকে হয়তো এই কষ্ট আর থাকবে না।

গতকাল গণভবনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে কী হতো তার জন্য বেশি দূর যেতে হবে না। ২০০১ সালে নির্বাচন, মাগুরার নির্বাচন, মিরপুর-১০ নির্বাচনগুলো স্মরণ করলে হবে। ১০ হোন্ডা, ২০ গুণ্ডার নির্বাচন। তিনি বলেন, তারপরও আমি বলব, তেল পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব থেকে আমরা কিন্তু মুক্ত নয়। এ জন্য যে যার জমিটুকু কাজে লাগান। ছাদবাগানসহ নানাভাবে উৎপাদন করেন। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে ওই দুর্ভিক্ষের আঁচ বাংলাদেশে লাগবে না।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আমলের তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল মাত্র ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যেটা তিন মাসের খাবার বা আমদানি করার পয়সা হতো না। সে অবস্থা আমরা ক্ষমতায় এসে (১৯৯৬) রিজার্ভ বাড়িয়েছি। ২০০৮-এ যখন আসি তখন ৫ বিলিয়নের বেশি ছিল না, সেখান থেকেও ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। তাছাড়া আমাদের যে লোন, আমরা কখনো ঋণখেলাপি হব না। তিন মাসের আমদানি খরচ হাতে রেখেই আমরা অন্য কাজ করেছি। তিনি বলেন, রিজার্ভ নিয়ে তো খুব আলোচনা, আমরা কী করেছি? আমাদের জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে। তেল, গম, ভুট্টা, খাদ্যশস্য কিনেছি। করোনার টিকা স্পেশাল বিমান পাঠিয়ে কিনে এনেছি। চিকিৎসায় হাসপাতাল ডেডিকেটেড করেছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবার থেকে আলাদা করে বাসা ভাড়া করে রেখেছি। যেন তারাও অসুস্থ না হয়, পরিবারও আক্রান্ত না হয়। ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় তাদের আলাদা করে একটা ভাতা দিয়েছি। যারা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন, চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের উত্থাপিত প্রশ্ন নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এক দিনে শত রাস্তা-সেতু উদ্বোধন করেছি। এটা কি বিএনপি করতে পেরেছে? আমরা করেছি। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য যথারীতি যেন চলে, সে জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। অভাবীদের খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। মহামারির সময় আমদানি বন্ধ থাকায়, পরে কাঁচামাল কিনতে হয়েছে। এগুলো আমাদের রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে। আমাদের কিন্তু এখনো পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ আছে, যেটা তিন মাসের থাকলেই চলে।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, গুম-খুন হত্যার রাজনীতিতে তারা (বিএনপি) বিশ্বাস করে। তাদের আমলে আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সে সময় মানুষের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। হাওয়া ভবনের পাওনা না দিলে ব্যবসা করার সুযোগ ছিল না। এই ছিল তাদের সময়ের অবস্থা। রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ খরচ নিয়ে সমালোচনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যাদের এ দেশের মাটির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এদের মাটির চরিত্র বুঝে না। তারা খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই। আমাদের এখানে রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ করতে গেলে আগে মাটি শক্ত করে নিতে হয়। এখানে নরম মাটি। সমালোচকরা সারা দিন কথা বলে আবার বলে বাকস্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি না করতাম, আর এতগুলো টিভি-রেডিও না দিলে কীভাবে কথা বলত? ফোন করলেও ১০ টাকা, ধরলেও। সেই ফোন সবার হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছি।

সরকারের নানা উদ্যোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় চাল দিচ্ছি। নিম্নআয়ের মানুষকে ১৫ টাকায় দিচ্ছি। আর ১ কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড (ফ্যামিলি কার্ড) করে দিয়েছি। ভর্তুকি মূল্যে তারা চাল, ডাল, তেল, চিনি কিনতে পারছে। কিছু লোককে ঘর করে দিয়েছি, আরও দেব। আমাদের টার্গেট এ দেশে একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। উপকূল ও বন্যাদুর্গত এলাকার জন্যও বিশেষ ঘর করে দিচ্ছি। বিনা পয়সায় বই দিই। বৃত্তি দিচ্ছি। কৃষকদের কৃষি উপকরণ দিচ্ছি। করোনায় শ্রমিকদের প্রণোদনা দিয়েছি। গার্মেন্ট শ্রমিকদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠিয়েছি। এ দেশের কোনো শ্রমিক বাদ যাননি। কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষও বাদ যাননি, সবাইকে নগদ অর্থসহায়তা করেছি। কই মানুষের কল্যাণে তারা এত কাজ করেনি। আমাদের আগে তো এরশাদ-খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এখন তো কেউ বাংলাদেশকে ছোট চোখে দেখে না। দেখতে পারে না। আমরা বিজয়ী জাতি, সারা বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলেছেন-পদ্মা সেতু করে কী লাভ হবে? এখন যে ইলিশ মাছ দুই ঘণ্টায় তাজা তাজা ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে, আর মজা করে খাচ্ছে। নানা কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ ওই অঞ্চল পুরোটাই অবহেলিত ছিল। এটা কি সুফল নয়? উপদেষ্টাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, অনেক কথা বলে ফেললাম। নানা সমালোচনা শুনতে হয় তো। এত কষ্ট করে, দিনরাত এত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে এই অবস্থানে নিয়ে আসছি। বাইরের লোকেরা দেখে, আমাদের দেশের লোকেরা দেখে না। তারপরও অনেক সমালোচনা শুনতে হয়, কষ্ট লাগে। যাক এখন আপনারা বলবেন, অনেক উপদেশ দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর