শিরোনাম
সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড়

বিতরণ কোম্পানিগুলো বিইআরসির কাছে জমা দিয়েছে প্রস্তাব

জিন্নাতুন নূর

পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণকারী চারটি সংস্থা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর কাছে আবেদন জমা দিয়েছে। বাকি দুটি কোম্পানিরও আবেদন জমা দেওয়ার কথা। তবে বিতরণ কোম্পানিগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা নির্দিষ্ট করে বিদ্যুতের দাম কী পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়- তা উল্লেখ করেননি। এর আগে গত জুন মাসে গ্যাসের দাম এবং গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়। সবশেষ গত ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি কর্তৃপক্ষ পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির সময়ই জানিয়েছিলেন  যে, পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির সঙ্গেই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু পাইকারিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির দুই দিনের মাথায় গত বুধবার ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির জন্য বিইআরসির কাছে আবেদন করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর পরদিনই বৃহস্পতিবার ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য বিইআরসির কাছে প্রস্তাব পাঠায়। এর মধ্যে পিডিবি ভোক্তা পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে ডিপিডিসি এবং ডেসকো দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ উল্লেখ করেনি। পাইকারির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়ালেও তাদের ক্ষতি হবে বলে একটি বিতরণ কোম্পানির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বিইআরসির কাছে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিলেও এতে টেকনিক্যাল ত্রুটি থাকায় তা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তারা পাইকারির সঙ্গে সমন্বয় করে দাম ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে নতুন করে আবার আবেদন জমা দেবে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং উত্তরাঞ্চলের শহর এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিরও (নেসকো) দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ বছরে দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এরই মধ্যে চারটি সংস্থা থেকে আবেদন পেয়েছি। বাল্ক বৃদ্ধির কারণেই বিতরণ কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। সব কোম্পানিগুলোর আবেদন পাওয়ার পর বিইআরসি তা গ্রহণ শেষে আইন অনুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছি। তবে নির্দিষ্ট কত পরিমাণ বাড়ানো দরকার- তা উল্লেখ করা হয়নি। বাল্ক যতটা বেড়েছে সেই হিসাব দেখেই আমরা বিইআরসির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কাওসার আমীর আলী বলেন, আমরা নির্দিষ্ট করে দাম কত শতাংশ বৃদ্ধি হবে- তার কথা উল্লেখ করেনি। যেহেতু আমরা কোনো মনোপলি ব্যবসা করি না, ফলে সরকারের নির্ধারিত দামেও যে আমরা খুব লাভ করছি এমন নয়। ২০ শতাংশ করে দাম বাড়ানো হলেও আমরা ক্ষতিতে থাকব। পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির সময় আমাদের সঙ্গে কথা বলে নিলে ভালো হতো। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামসুল আলম বলেন, সম্প্রতি পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সময় বিইআরসি কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন যে, এখন গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি হবে না। গণমাধ্যমকর্মীদেরও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এমন কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলোর এ প্রস্তাব প্রদান বিইআরসি ও প্রতিমন্ত্রীকে জনগণের কাছে আস্থা সংকটে ফেলেছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি আমদানি করতে না পারার অর্থ সংকট সব মিলিয়ে এই খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে রাষ্ট্রের আইনানুগ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের যথার্থতা যদি এমন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তাহলেও তা এক ধরনের সংকট।

 

সর্বশেষ খবর