মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে পরিত্যক্ত কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন

প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত আরও ৮ মিলিয়ন ঘনফুট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

ছয় বছর পরিত্যক্ত থাকার পর সিলেটের একটি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। গতকাল বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের এক নম্বর কূপ থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু করেছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)। কূপটিতে প্রায় ৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস মজুদের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বাপেক্স।

বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের উপমহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল জলিল প্রামাণিক বলেন, গত রবিবার রাতে পরীক্ষামূলক কিছু গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গতকাল থেকে জাতীয় গ্রিডে পুরোদমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এর আগে ফুয়েল কম্বিনেশন (পিকআপ বা চাপ) প্রক্রিয়া ঠিক করা হয়। আশা করা যাচ্ছে প্রতিদিন এই কূপ থেকে ৭ থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ সম্ভব হবে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের সমস্যা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। ছয় বছর পরিত্যক্ত থাকার পর পুনরায় কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলন বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এসজিএফএল সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে দুটি কূপ রয়েছে। এর মধ্যে এক নম্বর কূপ থেকে ১৯৯৯ সালে উৎপাদন শুরু হয়। পরে কূপ থেকে পানি ও বালু উঠে আসা শুরু হলে ২০১৪ সালে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুতে ফের উৎপাদন শুরু হলেও বছরের শেষের দিকে একই কারণে বন্ধ করতে হয়। এরপর থেকে গ্যাস কূপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি সরকার গ্যাস অনুসন্ধানের দিকে বিশেষ নজর দিলে বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের এক নম্বর কূপ নিয়ে ফের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। এতে কূপটিতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। পরে চলতি মাসের ১০ সেপ্টেম্বর পরিত্যক্ত কূপটিতে ফের খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শাহিনুর ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এসজিএফএলের অধীনে বিয়ানীবাজারের কূপ ছাড়াও গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা-৮ ও গোয়াইনঘাট-১০ নম্বর কূপ খনন এবং রশিদপুরে একটি পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষে এসজিএফএলের গ্যাস উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া দুটি প্রকল্পের আওতায় বিয়ানীবাজার ফিল্ড এবং ব্লক-১৩ ও ১৪-এর আওতায় ডুপিটিলা, বাতচিয়া, হারারগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও সিলেট সাউথে ত্রিমাত্রিক সিসমিক জরিপ কাজ সম্পন্নের পথে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে আরও কূপ খননের কাজ চলছে জানিয়ে এ প্রকৌশলী বলেন, ‘এতে ২০২৩ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০২৫ সালের মধ্যে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড থেকে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, দেশের গ্যাসের সবচেয়ে বড় মজুদ সিলেটে। ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মেলে। এরপর আবিষ্কৃত হয় আরও বেশ কিছু গ্যাসক্ষেত্র। দেশে বর্তমানে ২৮টি আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে মজুতের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বর্গফুট (টিসিএফ)। আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ।

সর্বশেষ খবর