বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সোহরাওয়ার্দীতে কয়েক হাজারের বেশি মানুষ ধরবে না : টুকু

শফিউল আলম দোলন

সোহরাওয়ার্দীতে কয়েক হাজারের বেশি মানুষ ধরবে না : টুকু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায়। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে এতে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ছোট মাঠে তা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। কারণ বিভিন্ন রকম স্থাপনা তৈরি করায় উদ্যানটির ভিতরে তেমন একটা খালি জায়গা নেই।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর জনস্বার্থে ঢাকায় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। মাত্র কয়েক হাজারের বেশি মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধরবে না। এ জন্যই আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশের স্থানের কথা উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের ভিতরে এত শঙ্কা বা উদ্বেগ কীসের?   আগামী ১০ ডিসেম্বর আসলে কী হতে যাচ্ছে। বিএনপি সেদিন কী করবে। সমাবেশের স্থান নিয়ে টানাপোড়েন কেন। এসব বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

টুকু বলেন, সমাবেশের স্থান নিয়ে তো আমাদের কোনো টানাপোড়েন নেই! কারণ আমাদের দলের পক্ষ থেকে মাত্র একটি স্থানের কথাই বলা হয়েছে। দ্বিতীয় কোনো স্থানের নাম বলা হয়নি। আমরা তো এখানে (নয়াপল্টনে) সব সময়ই সভা-সমাবেশ করে আসছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, সরকার কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেটা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। তাহলে নিশ্চয়ই তাদের মনে এ নিয়ে কোনো রকমের দূরভিসন্ধি থাকতে পারে। তা না হলে তারা কেন, এত উঠেপড়ে লেগেছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে এখন আর আগের মতো খালি জায়গা নেই, যেখানে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটতে পারে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি হওয়ায় কয়েক হাজারের বেশি লোকের ঠাঁই হবে না। এ জন্যই তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চেয়েছেন। তাছাড়া সরকারের ইচ্ছা মতোই যদি সভা-সমাবেশ করতে হয়, তাহলে আন্দোলনের মূল্যটাই বা কী থাকে? এখনো পর্যন্ত বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়েই অনড় রয়েছে এবং এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত।            

নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, শনিবার সরকারি ছুটি। অফিস-আদালত বন্ধের দিন। বিএনপি নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে প্রতিনিয়তই সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। সেখানে উভয় দিকেই খোলা রাস্তা রয়েছে। পূর্বদিকে ফকিরেরপুল হয়ে আরামবাগ, মতিঝিল, আর পশ্চিমে কাকরাইল, মৎস্যভবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত লোকসমাগম হলেও কোনো সমস্যা নেই। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা যার যার বাসাবাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এতে সরকারের মাথাব্যথা কীসের? তারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন? এটাই বোধগম্য নয়।   

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি; সব মিলিয়ে যেন এক নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। এর প্রতিবাদে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এসব দুর্ভোগ সরকারের ব্যর্থতায় সৃষ্টি। সরকারের গণবিরোধী এই নীতির বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের মধ্যে আটটিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ হবে। এরপর ১০ ডিসেম্বর হবে ঢাকা বিভাগে। বিএনপির ঘোষিত বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচির শেষ দিন হলো ১০ ডিসেম্বর। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে সেদিন হয়তো আবারও নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।    

দলের এই নীতি-নির্ধারক বলেন, বিএনপির গণসমাবেশে নানাভাবে বাধা দেওয়াটা সরকারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সেই পুরনো গায়েবি মামলা ও নিজেরাই গাড়ি ভাঙচুর করে, আবার ককটেল বিস্ফোরণ না হলেও বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে। এই মামলাগুলো দেওয়ার উদ্দেশ্য আগের মতোই, জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা। এই দুরভিসন্ধিমূলক চক্রান্ত। নানা ধরনের বাধা-বিঘ্ন। কিন্তু এত কিছু করেও বিএনপির কোনো সমাবেশে জনস্রোত থামানো যাচ্ছে না। ফলে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ আর বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় হামলা ও অভিযানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যেন ব্যাপক গণজমায়েত না হয়। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হবে। সেদিন জনস্রোত নামবে ঢাকায়। আর সেই গণসমাবেশ নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর