১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। উত্তাল রণাঙ্গনে কোণঠাসা পাকিস্তানি বাহিনী। যৌথবাহিনীর উপর্যুপরি হামলায় বিভিন্ন এলাকায় পরাস্ত তারা। আতঙ্কিত জেনারেল নিয়াজি পরিস্থিতি জানিয়ে রাওয়ালপিন্ডি হেডকোয়ার্টার্সে এক গোপন বার্তা পাঠান। তাতে জানান, ‘পাকিস্তানি সেনারা দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোরে প্রবল চাপের মুখে আছে। ট্যাংক, ভারী কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। গত ১৭ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর জানমালের ক্ষতিই বেশি হয়েছে।’ ৭ ডিসেম্বরের ওই বার্তা পেয়ে পাকিস্তান সরকারের মনোবল চুরমার হয়ে যায়। তারা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। হেডকোয়ার্টার্স থেকে সম্মুখসমরের সেনাদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ ঘাঁটিগুলোয় হামলা শুরু করেন। পেছনের পথ দিয়ে পালাতে শুরু করে হানাদার বাহিনী। ডিসেম্বরে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে মুক্তাঞ্চলের সংখ্যা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাজি রাখা প্রচেষ্টায় ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা, শেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মোংলাসহ সুন্দরবন এলাকা, নোয়াখালী, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, সুনামগঞ্জের দিরাই, গোপালগঞ্জ, সিলেট বিমানবন্দর ও সংলগ্ন এলাকা, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহের ভালুকাসহ দেশের বিস্তৃত এলাকা হানাদারমুক্ত হয়। তবে পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ব্রিজ, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি পৃথক দল তিন দিক থেকে এসে সাতক্ষীরা ঘিরে ফেলে। খবর পেয়ে গভীর রাতে পাকিস্তান বাহিনী সাতক্ষীরা ছাড়তে শুরু করে। যাওয়ার পথে তারা বেনেরপোতা ও সরসকাটি ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে যায়। সীমান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্প গুটিয়ে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর শেরপুর আশ্রয় নেওয়া পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৭ ডিসেম্বর পালিয়ে জামালপুরের পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। ৭ ডিসেম্বর ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমান কোম্পানীগঞ্জ থানায় স্থাপিত তৎকালীন রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে পাকিস্তান বাহিনীর ৯০ জন সশস্ত্র সদস্যকে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। এদিন ৯ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ও সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পাক হানাদারদের হটিয়ে মোংলাসহ সুন্দরবন এলাকা মুক্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৭ ডিসেম্বর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বেতার ভাষণে বলেন, ‘ঢাকা হানাদারমুক্ত হতে আর সময়ের প্রয়োজন হবে না। খুব শিগগির ঢাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসবে। বাংলাদেশ এখন দিবালোকের মতোই সত্য। আমাদের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধুও খুব শিগগির বাংলার বুকে ফিরে আসবেন।’ একই দিন রাত ১০টায় ভারতীয় বেতার কেন্দ্র আকাশবাণী থেকে হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় জেনারেল মানেকশ বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য তোমাদের ঘিরে রেখেছে। তোমরা যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছ, তারা তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেরি হওয়ার আগেই তোমরা আত্মসমর্পণ কর।’ আগের দিন ৬ ডিসেম্বর ভারত ও ভুটান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি পায় দেশ। ৭ ডিসেম্বর এ খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের ক্ষণ গণনা শুরু হয়। ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাক্সিক্ষত দিন।
শিরোনাম
- বাংলাদেশের কোচ হয়ে যা বললেন টেইট
- ফারিণের এক হাতে ফুল, অন্য হাতে কুড়াল
- কাতারের বিমান উপহার পাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প
- ফাইনাল নিশ্চিত করল শেফিল্ড; ফিরতি লেগেও দুর্দান্ত হামজা
- শনিবার থেকে আবারও শুরু হচ্ছে আইপিএল
- একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৩ মে)
- রেস্টুরেন্ট নয়, এ যেন মরণফাঁদ!
- বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অচল লন্ডনের পাতাল রেল ব্যবস্থা
- সর্বশেষ জীবিত মার্কিন-ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
- ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে মহাসমাবেশ
- ময়মনসিংহে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন পরিবারের পাশে তারেক রহমান
- স্বর্ণের দাম আরও কমেছে
- আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত: ইসি সচিব
- মিয়ানমার জান্তার বিমান হামলায় ১৭ শিক্ষার্থী নিহত: রিপোর্ট
- ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে
- বাগেরহাটে খালের পাড়ে পড়ে ছিল বৃদ্ধের মরদেহ
- গাজা যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহুকে এক হাত নিলেন ইসরায়েলের সাবেক সেনাপ্রধান
- ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে
- ভুটানের লিগে ম্যাচসেরা বাংলাদেশের কৃষ্ণা, দল জিতেছে ৮-০ গোলে
- অধিনায়ক লিটনের লক্ষ্য সিরিজ জয়