শিরোনাম
শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ফুটবল যুদ্ধ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কাতার থেকে

ছয় বছর আগের কথা। হুলিগান খ্যাত ইংলিশ ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী কী ভয়ংকর তা-ব করেছিল ফ্রান্সে? দাঙ্গা পুলিশের আগুন, পানি আর কাঁদানে গ্যাস কোনো কাজে আসেনি তখন। ফুটবল মাঠে ইংলিশ সমর্থকদের উগ্রতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। ফরাসিরাও ফুটবল নিয়ে পাগলের মতো আচরণ করে। প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের ওপর হামলে পড়তে কসুর করে না। আজ আল খোর শহরের আল বাইত স্টেডিয়ামে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ম্যাচেও কি এমনই উগ্রতা দেখা যাবে? বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামছে দুই পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী। সবকিছুকে আড়াল করে দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ফুটবল সৌকর্য দেখতে অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।  ফ্রান্স-ইংল্যান্ড লড়াই। শব্দ যুগল উচ্চারিত হলেই অতীতের পাতা থেকে উঠে আসে অসংখ্য অধ্যায়। যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় অসংখ্য এমন ঘটনা যা কল্পনারও অতীত। দুই দেশের যে কোনো লড়াইয়ে থাকে অতীতের ছায়া। ফুটবল মাঠের লড়াইটা হয় আরও ভয়ংকর। একজন ফ্রেঞ্চকে জিজ্ঞেস করুন, ইংরেজি জানে কি না। সে অপমাণিত বোধ করতে পারে। উল্টোটাও সত্যি। একজন ইংরেজকে ফ্রেঞ্চ জানে কি না জিজ্ঞেস করা যায় না। ইংলিশ চ্যানেলের এপাড়-ওপাড়ের দেশ দুটি প্রতিবেশী হলেও হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা যুদ্ধে জড়িয়েছে। কখনো কর্সিকান সংকটে, কখনো ফকল্যান্ড আইল্যান্ড যুদ্ধে নেমে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কখনো ফ্রান্সে প্রবেশ করেছে ব্রিটিশরা। কখনো ফরাসিরা নিজেদের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ইংল্যান্ডের দরোজায়। কখনো নিজেরা নিজেরাই যুদ্ধ করেছে। আবার কখনো অন্যের যুদ্ধে নাক গলিয়ে প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে দুই দেশ। চিরশত্রু বললেও ইংল্যান্ড-ফ্রান্স সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা কঠিন। এই শত্রুতা যুদ্ধের ময়দানের মতোই ছড়িয়ে আছে দুই দেশের ঘরে ঘরে। ফুটবল মাঠেও যে উত্তাপ কোনোদিন কমেনি।

ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ফুটবলীয় লড়াইয়ের উত্তাপ বেশ আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে। গ্রুপ পর্বের পর থেকেই। যখন নিশ্চিত হয়েছে, কোয়ার্টারেই দেখা হতে পারে দুই দলের। ইংল্যান্ড সরকার হুলিগানদের চিহ্নিত করে কাতার আসার অনুমতি দেয়নি। এমন খবর বেরিয়েছে সংবাদ মাধ্যমে।

 কিন্তু হুলিগান গোষ্ঠীতে আছে লাখ লাখ সদস্য। সবাইকে বাধা দেওয়া কি আর সম্ভব! অনেকেই হয়তো ভদ্রতার ছদ্মবেশে পৌঁছে গেছেন দোহায়! আজ আল বাইত স্টেডিয়ামে বাড়তি নিরাপত্তাই দিতে হবে কাতারকে। অবশ্য এই দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কড়া। ইউরোপিয়ানদের মতো অতটা ভদ্র নয়। এমনিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু আইন ভাঙতে দেখলেই তেড়ে আসে। পরিচয় জানার আগে শাস্তি দিয়ে নেয়। আইন ভাঙার জন্য অপমাণিত হতে হয় জনসম্মুখে। কঠোর হাতে তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে অভ্যস্ত। ফ্রান্স-ইংল্যান্ড লড়াই নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে ভিন্ন রকমের উত্তেজনা। এই উত্তেজনা ফুটবলারদের মধ্যেও যে ভিতরে ভিতরে আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বাইরে তা প্রকাশ পায় না। গতকাল ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী কোচ দিদিয়ের দেশম যেমন মৃদু হেসে বললেন, ‘প্রতিপক্ষ যেই হোক, আমরা নিজেদের খেলাটাই খেলব।’ ফ্রান্স নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে যে কোনো প্রতিপক্ষই কাত হয়ে যেতে পারে। ইংলিশ কোচ সাউথগেট তাই বলছেন, ‘প্রতিপক্ষের খেলা সম্পর্কে আমরা জানি। তাদের শক্তি ও দুর্বলতাও আমাদের জানা আছে।

 সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই খেলতে নামব আমরা।’ সেই পরিকল্পনা ফ্রান্সকে বিদায় করব নিশ্চয়ই!

ফ্রান্স-ইংল্যান্ড ফুটবল নিয়ে লড়াই করেছে ১৯২৩ সাল থেকে। প্রথমবার ৪-১ গোলে ফ্রান্সকে হারায় ইংলিশরা। প্রথম ছয়টা লড়াইয়ে জয় পায় ইংল্যান্ড। সবমিলিয়ে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৩১ বার। এর মধ্যে ১৭ বারই জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। ৯ বার জয় পেয়েছে ফ্রান্স। ৫ বার ড্র করেছে দুই দল। অতীত নিয়ে ইংল্যান্ডের সুখ করার তেমন কিছুই নেই। নতুন শতকের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে ফ্রান্স। ২০০০ সাল থেকে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এর মধ্যে কেবল একবার জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড (২০১৫ সালে প্রীতি ম্যাচে)। বাকি ছয় ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে ফ্রান্স। দুটিতে ড্র করেছে। সুতরাং, আজ ফ্রান্সই ফেবারিট হিসেবে খেলতে নামবে আল বাইত স্টেডিয়ামে।

ফ্রান্সের সামনে একটা খড়গ ঝুলছে। ১৯৬২ সালে টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়ে ব্রাজিল (১৯৫৮ সালেও চ্যাম্পিয়ন)। এর আগে এই রেকর্ড গড়েছিল ইতালি (১৯৩৪ ও ১৯৩৮)। এরপর আর কেউ টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ১৯৬২-এর পর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি টানা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও এই রেকর্ড গড়তে পারেনি। ফ্রান্সের সামনে দারুণ সুযোগ। ইতালি ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় দল হিসেবে রেকর্ডটা গড়তে পারে তারা! তবে সুযোগটা বড় বাধাও হতে পারে। এত বছর যা অন্যরা পারেনি, তা কী পারবেন এমবাপ্পেরা!

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর