বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রী

খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত আমেরিকা কানাডা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, বরং মানবাধিকারের সুরক্ষা   দেয়। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সমস্যা সমাধান করে এবং মানুষের জন্য কাজ করে। শুধু বেঁচে থাকাই তো মানবাধিকার না। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি, স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি। বিনা পয়সায় করোনা ভ্যাকসিন দিয়েছি, ওষুধ দিয়েছি, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমেরিকা ও কানাডা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেশ দুটোর কাছে বারবার দাবি করেছি যে, জাতির জনকের সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ফেরত দিন। কিন্তু তারা ফেরত দেয় না। তারা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন সভা পরিচালনা করেন।    

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অনেকে গুম-?খুন নিয়ে কথা বলে। আরে এ দেশে গুম-খুনের কালচার (সংস্কৃতি) তো শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। আমাদের শত শত নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। নির্বিচারে ফাঁসি দিয়ে মানুষ হত্যার সংস্কৃতিও এই জিয়াউর রহমানের। একদিনে ১০ জনকে ফাঁসি দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের যারাই প্রতিবাদ করেছে, তাদেরই হত্যা করেছে এই জিয়াউর রহমান। শত শত সামরিক অফিসার, সৈনিককে ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে। অনেক পরিবারই লাশ খুঁজে পায়নি। এখনো হাজার হাজার মা-বোন ও ভাইয়ের কান্না শোনা যায়। কত মানুষকে জিয়াউর রহমান হত্যা করেছে! এক বিমান বাহিনীরই ৫৬২ জনসহ প্রায় ২ হাজার সামরিক অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করেছে। সে পরিবারগুলো আজও তাদের আপনজনের জন্য কেঁদে ফেরে। কই, তাদের মৃতদেহের খবরটাও তো পায়নি। এরপরও কোন মুখে বিএনপি গুম-খুন নিয়ে কথা বলে?

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তারা জাতির জনকের খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে। তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি? আমার মানবাধিকার নিয়েও তো প্রশ্ন করতে পারি। যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়, তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? আমার মানবাধিকার কোথায়? পিতা-মাতা-ভাইসহ পরিবারের ১৮ জনকে হত্যার বিচার চাইতে পারিনি, একটা মামলাও করতে পারিনি। ছয় বছর দেশে ফিরতে পারিনি। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল? এর জবাব কে দেবে? দেশে জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী কারা মারা গেছে, সেটা নিয়ে ব্যস্ত তারা (মানবাধিকার সংগঠন)। তিনি বলেন, আজকে বুদ্ধিজীবী দিবস আমরা পালন করি। বিএনপির কি  কোনো কর্মসূচি আছে? সেটাতে কী বোঝা যায়! জিয়া-এরশাদ-খালেদা স্বাধীনতাবিরোধীদের বিভিন্ন পদ দিয়েছে।   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছরের লড়াই-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। অথচ আমরা বাবা-মার লাশ পর্যন্ত দেখতে পারিনি। একাত্তরের মতোই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমাদের পরিবারের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদাররা গণহত্যা শুরু করে। রাজাকার-আলবদর বাহিনী হানাদারদের দেখিয়ে দিয়ে সারা গ্রাম-বাংলায় নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন চালায়। ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। বুদ্ধিজীবীদের এমনভাবে হত্যা করা হয় যে যিনি চোখের ডাক্তার, তার চোখ উপড়িয়ে, যিনি হার্টের ডাক্তার তার কলিজা ছিঁড়ে হত্যা করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই, স্বাধীনতা পেলেও বাংলাদেশে যেন কোনো জ্ঞানী-গুণী না থাকে, মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। বাংলাদেশ যেন চলতে না পারে। তিনি বলেন, স্বাধীন জাতিকে মেধাশূন্য করতেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধভাবে সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে মুক্তি দিয়ে পুনর্বাসিত করে। মুক্তিযোদ্ধা সামরিক-বেসামরিক অফিসারদের এই জিয়া নির্বিচারে হত্যা করে। নিষিদ্ধ থাকা রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে জিয়া-এরশাদের মতো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত এবং যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানায়। তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল? সেদিন যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল সেই যুদ্ধাপরাধীদের আমরা বিচার করেছি, অনেকের রায়ও কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা করলাম। তখন সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ও সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভালো নয়, তাহলে বিদেশ থেকে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। মানে আমাদের বিদেশিদের কাছে ভিক্ষা নিয়ে চলতে হবে! তিনি বলেন, এসব কারণেই তাদের (বিএনপি) চোখে আমাদের উন্নয়ন চোখে পড়ে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, যার সুবিধা সবাই ভোগ করছেন। বাংলাদেশ কেন এত দ্রুত আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এটাই তাদের বড় কষ্ট। তিনি বলেন, এই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। এফবিআই তদন্ত করে বের করেছে তারেক রহমান ও কোকোর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনা। অর্থ পাচার, অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এসব মামলা তো আর মিথ্যা নয়, এফবিআই তদন্ত করেছে, তারা এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এতিমের টাকা মেরে খেলে তার শাস্তির কথা পবিত্র ইসলাম ধর্মেও বলা আছে। আর এসব মামলা তো আমরা দিইনি। খালেদা জিয়ারই প্রিয়ভাজন ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনরাই এ মামলা দিয়েছে। এখানে আমরা কী করব। অন্যায় করেছে, সাজা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধেও খালেদা জিয়া ১২টা মামলা দিয়েছিল। একটি মামলাও এক্সিকিউটিভ অর্ডার দিয়ে প্রত্যাহার করা হয়নি। প্রত্যেক মামলার তদন্ত হয়েছে, কিছু খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ দিল, আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। কানাডার আদালত রায় দিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া। আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করেছি। এখন আমার প্রশ্ন, খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালির এই সেতুতে কেউ উঠবে না! তবে কি বিএনপি নেতারা সাঁতরিয়ে বা নৌকা করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছে? তাদের পদ্মা সেতুতে উঠতে লজ্জা লাগেনি। খালেদা জিয়া তো নিজেই নিষেধ করেছিল, তবে তারা উঠল কেন। গঙ্গা চুক্তির সময়ও খালেদা জিয়া বলেছিল পানি আসেনি, এই পানি হালাল না। তাদের এত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আর কত লড়বেন? এরা কোনো দিনই চায় না বাংলাদেশ ভালো থাকুক, এগিয়ে যাক। বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তাদের সখ্যতা বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, খুনি ও জঙ্গিদের সঙ্গে। যারা সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছে তাদের আমরা বিচার করেছি। আর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে পুনর্বাসিত করে। খুনিরাই তাদের (বিএনপি) কাছে হিরো।

সর্বশেষ খবর