বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ফারদিনের

বলছে ডিবি, আত্মহত্যা নাকি কেউ ফেলেছে নিশ্চিত নয় র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ফারদিনের

ফারদিন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ চনপাড়া যাননি। তিনি সুলতানা কামাল শীতলক্ষ্যা সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে ডিবি মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা বললেও র‌্যাব ওই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলতে নারাজ। র‌্যাবের দাবি, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে ফারদিন সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন। তবে তাকে কেউ ফেলে দিয়েছে কি না তা নিশ্চিত নয় তারা।

গত রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার দিন ডেমরার কোনাপাড়ার নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশে বের হন ফারদিন। বিকাল আনুমানিক ৫টায় ফারদিন সায়েন্স ল্যাব মোড়ে তার পরিচিত এক মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন। তারপর সেখান থেকে নীলক্ষেত, ধানমন্ডিসহ পাশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে সাতমসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পাশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করেন। পরে তিনি রিকশায় রামপুরার উদ্দেশে রওনা হন। রাত পৌনে ১০টায় রামপুরা ব্রিজ এলাকায় তিনি রিকশা থেকে নেমে যান এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরে ফারদিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় যান। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে রাত ২টা ১ মিনিটে (সিসিটিভি ফুটেজ টাইম ২টা ৩ মিনিট) যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা থেকে ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অন্য পাশে তারাব বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যান ফারদিন। রাত ২টা ২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাব প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। রাত ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসেন ফারদিন। ব্রিজের তারাব প্রান্ত থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজের মাঝখান পর্যন্ত দূরত্ব আনুমানিক ৪০০-৫০০ মিটার। রাত ২টা ৩৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের রেলিং ক্রস করে রাত ২টা ৩৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ব্রিজের ওপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেন ফারদিন। ঝাঁপ দেওয়ার পর রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২১ সেকেন্ডে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পড়েন তিনি। রাত ২টা ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে তার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া রাত ২টা ৫১ মিনিটে পানি ঢুকে ফারদিনের হাতঘড়ি অকার্যকর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গতকাল বিকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত করে ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। ফারদিনের স্পেন যাওয়ার কথা ছিল। টাকা ম্যানেজ হয়নি। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল। মনে হচ্ছে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তিনি সাঁতার জানতেন না। সবকিছু মিলিয়ে আমরা মনে করছি এটি আত্মহত্যা।’ ডিবির মতিঝিল বিভাগের এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটি একটি আত্মহত্যা। আমরা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছি। সার্বিক দিক দেখে মনে হয়েছে এটি আত্মহত্যা।’ তবে ঠিক কী কারণে এই বুয়েট ছাত্র আত্মহত্যা করতে পারেন, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে চাননি তিনি। প্রসঙ্গত, ৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। লাশের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, এটি হত্যাকান্ড। ফারদিনের মাথা ও বুকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে এ ঘটনায় তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা হয়। মামলার বাদী হন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা। মামলার পর ১০ নভেম্বর হত্যা করে লাশ গুম করার অভিযোগে রামপুরার একটি বাসা থেকে বান্ধবী বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর