শিরোনাম
রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গুম খুন সংস্কৃতি চালু করেন জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়ার আদেশ পালন করা জেলখানার জল্লাদরাও অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন কী ঘটছে এসব। সে সময়ে সাদা মাইক্রোবাসে যাদের তুলে নিয়ে গেছে তাদের লাশও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এতে জাতীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে জাতীয় কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে আসন্ন সম্মেলনের বাজেট পেশ করা হয় এবং যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে আবেদন করেছেন, তাদের বিষয়টিও তোলা হয়। এ ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল সম্পর্কে জাতীয় কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়। দীর্ঘ তিন বছর পর অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের আয়-ব্যয়ের হিসাব পাস করানো হয়। শেখ হাসিনা বলেন, একটি মহল লোভে ব্যক্তিস্বার্থে দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ধ্বংস করতে চায়। এখানে গণতন্ত্রের অভাবটা কোথায়। নাকি যারা এ কথা বলেন তাদের ভালো লাগে যখন জরুরি অবস্থার সরকার হয়, সামরিক শাসক আসে, তাদের একটু কদর বাড়ে। খোশামোদি-তোষামোদি করে। তিনি বলেন, ওইটুকু পাওয়ার লোভে... ব্যক্তিস্বার্থের জন্য তারা দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই ধ্বংস করতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, জনগণের শক্তিটাই বড় শক্তি। তাদের বিশ্বাস ও আস্থাটাই বড় শক্তি। তিনি বলেন, জিয়ার আমলে সেনাবাহিনীতে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। রাজশাহী-বগুড়া-ঢাকা-খুলনা কারাগারসহ বিভিন্ন কারাগারে শত শত সেনা অফিসার, সৈনিক, বিমান বাহিনীর অফিসার এবং অগণিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। তাদের পরিবার তো লাশই পায়নি। লাশও গুম করে ফেলা হয়েছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যাদের (বিএনপি) জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, মার্শাল ল’-এর মধ্য দিয়ে। তারা আবার আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়, পরামর্শ দেয়। তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবে। শেখ হাসিনা বলেন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। খালেদা জিয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৬ সালে ভোট করতে চেয়েছিল। এটা কেউ ভুলে যান নাই। তিনি বলেন, ভুয়া ভোটার তালিকা দিয়ে ভোট করা মানে হলো ভোট চুরির চেষ্টা করা। আমার কাছে মনে হয়, ওটাই তাদের কাছে গণতন্ত্র। শেখ হাসিনা বলেন, কেউ ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছে, মানুষ মেনে নেয়নি। এরপর ২০০১-এ সরকার গঠন করে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে, জনগণ তা মেনে নেয়নি। সে নির্বাচন বাতিল হয়েছে। বিএনপি, খালেদা জিয়াকে দুই দুইবার ভোট চুরির অপরাধে সরে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু মানুষ যারা, নিজেদের বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুণী বলে পরিচয় দেন, তাদের মুখেও শুনি গণতন্ত্র নাকি আনতে হবে দেশে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সামরিক শাসকরা মার্শাল ল’ দিয়ে রাষ্ট্র চালিয়েছিল, সেটাকেই কি তারা গণতন্ত্র বলতে চান নাকি। ওইটাই কি তাদের গণতান্ত্রিক ধারা? বিএনপি কোন মুখে ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করে তা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ৩০টা সিট (আসন)। এটা সবার মনে রাখা উচিত। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে না। আর আওয়ামী লীগ দুই- তৃতীয়াংশ মেজরিটি পায়। তাহলে পরবর্তী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোন মুখে প্রশ্ন তোলে। তিনি বলেন, আমি জানি না যারা এখনো গণতন্ত্রের খোঁজ করেন, মনে হয় যেন দুরবিন দিয়ে ওনারা গণতন্ত্র দেখতেছেন। তাদের আমি জিজ্ঞাসা করব জাতির পিতার সাড়ে তিন বছর ও আওয়ামী লীগের আমল ছাড়া কবে গণতন্ত্র ছিল। ক্ষমতা তো ছিল সেনানিবাসে বন্দি। সেনানিবাস থেকে চালানো হতো দেশ। যারা এই ১৪ বছর নিয়ে কথা বলেন তাদের বলব এর আগের বাংলাদেশটা দেখেন, আর এখন বাংলাদেশটা দেখেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছি। প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নতি করেছে। আওয়ামী লীগ একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে বলেই সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকান্ডের বিচার হবে বলে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। আর সেটা করতে গিয়ে অবৈধ মিলিটারি ডিক্টেটর সেনাবাহিনীর বহু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, হাজার হাজার সৈনিককে হত্যা করে। বিমান বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করে। তাদের গ্রেফতার করে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কারাগারে নিক্ষেপ করে। এই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতায় বসে একটা দলও গঠন করে ফেলে এবং মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে হবে। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগে থেকে মানুষকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমরা সঞ্চয়ের কথা বলছি, সাশ্রয়ের কথা বলছি। বিদ্যুৎ-পানি থেকে শুরু করে আমাদের সবকিছু সাশ্রয় করতে হবে। আমাদের জ্বালানি তেল সাশ্রয় করতে হবে। কারণ, অনেক দাম দিয়ে আমাদের এখন জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। প্রচ- চাপ পড়েছে বাজেটের ওপর। তারপরও আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদা নিয়েই চলবে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী- যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন; আমরা তাদের বিচার করছি। জাতির পিতার হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। আর আলবদর-রাজাকারদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আমরা তাদের বিচার করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকায় খুনি রাশেদ, কানাডাতে খুনি নূর, পাকিস্তানে খুনি রশিদ আর ডালিম আশ্রয় নিয়ে আছে। মোসলেম উদ্দিন বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। কখনো তার হদিস পাওয়া যায়, কখনো যায় না। কিন্তু প্রতিটি দেশের সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেছি তাদের ফিরিয়ে দিতে। এরা জাতির পিতার হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী- এদের ফেরত দিতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের কাছ থেকে আমরা সেই সাড়া পাই না। তিনি বলেন, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হলো, সেই বিবেচনা তাদের নেই। কিন্তু ওই খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত। কারণ তাদের ফাঁসির হুকুম হয়েছে। সে জন্য তাদের অধিকার রক্ষা করে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়। আওয়ামী লীগ সরকার ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিচারহীনতার কালচার শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান; সেখান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রত্যেকটা সেক্টরের উন্নতি করেছি। জাতির পিতার এই বাংলাদেশে একটি মানুষও অভুক্ত থাকবে না। একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ তার মৌলিক অধিকার পাবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।

সর্বশেষ খবর