সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জাদুকরের হাতেই সোনালি ট্রফি

মেজবাহ্-উল-হক

জাদুকরের হাতেই সোনালি ট্রফি

হাসতে হাসতে দৌঁড়ে গিয়ে মঞ্চে উঠলেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল হাতে নিলেন। তারপর ধীর ধীরে পাশেই রাখা বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে  চলে গেলেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। পরম মমতায় ট্রফিটা দুহাত দিয়ে ধরে একটা চুম্বন এঁকে দিলেন। লুসাইল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে মেসি মেসি রবে প্রকম্পিত। শুধু কাতারের লুসাইল কেন পুরো বিশ্বই তখন মেসি মেসি রবে মাতোয়ারা।

বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতার যেমন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে, তেমনি ফাইনালটাও ছিল দেখার মতো। কী দুর্দান্ত। শ্বাসরুদ্ধকর, অবিশ্বাস্য, অসাধারণ এক ফাইনাল। পরতে পরতে উত্তেজনা। উন্মাদনায় ঠাসা ম্যাচে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মেসির আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর পর শিরোপা জিতল আলবেসিলেস্তোরা। লুসাইল যুদ্ধে জিতে মহানায়ক হয়ে গেলেন লিওনেল মেসি। আসরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’ জিতলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এই আসরে মেসির মোট গোল ৭টি। সব মিলে বিশ্বকাপের মতো আসরে ১৩ গোল করে নিজেকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এই জীবন্ত কিংবদন্তি। ব্যক্তিগত অর্জনের আগেই সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন লিওনেল মেসি। সেটা যেমন ক্লাব ফুটবলে তেমনি আর্জেন্টিনার জার্সিতেও। কেবল অপূর্ণতা ছিল বিশ্বকাপটি। সেটিও এবার জয় করলেন লিওনেল মেসি।

ফাইনালে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। দুটি দুর্দান্ত গোল করেছেন। পেনাল্টিতেও তার নিশানা ছিল নির্ভুল। এই ফাইনালে নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পেরও। গতকাল হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ফাইনালে জিওফ হার্স্ট প্রথম হ্যাটট্রিক করেন। এরপর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন এমবাপ্পে। তবে ফাইনালে হেরে গিয়ে তিনি ট্র্যাজিক হিরো হয়ে গেলেন। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল টান টান উত্তেজনা। ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল ভেন্যু বলে কথা। লিওনেল মেসি নাকি কিলিয়ান এমবাপ্পে -কে হবেন লুসাইল যুদ্ধের মহানায়ক? ফাইনালের আগে এমন প্রশ্ন ছিল ফুটবল প্রেমীদের মুখে মুখে! ফাইনালে মাঠে নামার আগে কাতার বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানের খেরো খাতায় আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসি ও ফরাসি তারকা এমবাপ্পে সমানে সমান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেসি জাদু দেখিয়ে বিশ্বকে অবাক করে দিলেন। স্বপ্নপূরণ হলো ফুটবলের শ্রেষ্ঠ তারকার।

ব্যক্তিগত অর্জন কিংবা জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সবার ওপরে ছিলেন লিওনেল মেসি। কাতার লুসাইল স্টেডিয়াম ছিল মেসিময়। শুধু কাতার কেন গোটা বিশ্বই যেন গতকাল মেসি মেসি রবে প্রকম্পিত হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মেসিরই জয় হলো। জয় হলো ফুটবলের।

মেসির শোকেজে যেন ট্রফি আর ট্রফি। অর্জনের তালিকাটা খুবই লম্বা। তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন বার্সেলোনায়। কাতালানের হয়ে ১০টি স্প্যানিশ শিরোপা জিতেছেন। এ ছাড়াও যে সব শিরোপা জিতেছেন সেগুলো হচ্ছে, ৭টি কোপা দেল রে, ৭টি স্প্যানিশ সুপার কোপা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি উয়েফা সুপারকাপ এবং তিন তিনবার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছেন। ফরাসি দল পিএসজির হয়ে এক মৌসুমে খেলে দুটি শিরোপা জিতেছেন।

আর্জেন্টিনার জার্সিতেও মেসির অর্জন কম নয়। একবার কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছেন। একবার করে যুব বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের পর দ্বিতীয় বারের মতো আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। এর বাইরে আর্জেন্টিনাকে আরও তিনবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে তুলেছিলেন। 

গত বছর কনমেবল-উয়েফা কাপেও আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।  কনমেবল-উয়েফা কাপে অংশ নেন   কোপা চ্যাম্পিয়ন ও ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন দল। অবশেষে বিশ্বকাপ স্বপ্নও পূরণ হয়ে গেল ফুটবল জাদুকরের।

জীবনের সব শেষ জাদুটা কাতারেই দেখালেন মেসি। এবারের বিশ্বকাপে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন মেসি। লিওনেল মেসিকে তুলনা করা হচ্ছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে। তবে ইংলিশ কিংবদন্তি ও ৮৬ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যারি লিনেকারের মতে মেসি সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। লিনেকার বলেন,  ‘পেলেকে আমার হিসেবে রাখব না। কারণ, তার খেলা আমি দেখিনি। আমি ম্যারাডোনার সঙ্গে খেলেছি। মেসির খেলা উপভোগ করছি। প্রতিটি মুহূর্তই যেন অন্যরকম আনন্দ। গত দুই দশক ধরে তিনি ফুটবলপ্রেমীদের যে আনন্দ দিচ্ছেন, তার যে ক্যারিশমা তাকেই আমি ফুটবলের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার মনে করি।’

কালকের রাতের ফাইনালে যেন বিশ্ববাসী নতুন করে পেয়ে গেলেন সেই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর- কে সর্বকালের সেরা ফুটবলার!

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর