সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখন ডিপ্লোম্যাসি পলিটিক্যাল নয় ইকোনমিক হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন ডিপ্লোম্যাসি পলিটিক্যাল নয় ইকোনমিক হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখনকার ডিপ্লোম্যাসি (কূটনীতি) পলিটিক্যাল ডিপ্লোম্যাসি নয়, ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি হবে। প্রত্যেক দূতাবাসকে রপ্তানি বাণিজ্য, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, আমরা কী রপ্তানি করতে পারি বা কোথায় থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

গতকাল পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। মেলা উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, ওই এলাকার বাংলাদেশের যারা রাষ্ট্রদূত তাদের ডেকে সেভাবে ব্রিফ করেছি। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেটা বলে দেওয়া আছে। দূতাবাস চেষ্টা করবে, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে। আমরা সেটাই রপ্তানি করতে চেষ্টা করব। এভাবেই বাণিজ্য বৃদ্ধি করব। শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা ও পরিবার হারিয়ে এ দেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। এ দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ সবকিছুর উন্নয়ন করছি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিরবচ্ছিন্ন চান তবে এগুলো কিনতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই মূল্য দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে? ভর্তুকি তো জনগণের পয়সায় এত বেশি দেওয়া যায় না। কাজেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে অন্তত একটু নজর দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সড়কসহ সব ধরনের চলাচল অবকাঠামোর উন্নয়ন করে চলেছে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল পদ্মা সেতু। সেটিও নির্মাণ হয়েছে। সারা বাংলাদেশ আমাদের ডিজিটাল নেটওয়ার্কে চলে এসেছে। তিনি বলেন, কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করা, বেসরকারি খাতে মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যাতে সবার কাছে সেবা পৌঁছায়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি, বেসরকারি খাতের প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই আমরা শুরু করি ১৯৯৬ সালে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে, সারা বাংলাদেশে একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক করে ফেলেছি। রেল থাকতেই হবে, সেটা আরও উন্নত করতে হবে, আমরা সেটা করে দিয়েছি। মেট্রোরেল চালু হয়েছে। আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে। আমি এটাকে কমলাপুর পর্যন্ত করতে বলে দিয়েছি। রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্য বহুমুখীকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের দিকে মনোযোগী হতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। এটা বহুমুখী করার কথা; আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা ও আমরা যত বেশি বাজার পাব, তত বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারব। ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’ এ কথা আদিকাল থেকে শুনে আসছি। সেটাই আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা মিশনে বাণিজ্যিক উইং খোলা হয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এগুলো খোলা হয়েছে যাতে আমরা আমাদের বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করতে পারি। ‘অর্থনৈতিক কূটনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। প্রত্যেকটা দূতাবাসকে ব্যবসা-বাণিজ্য রপ্তানি কোন দেশে কীসের চাহিদা বেশি, কী আমরা রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বাইরে কল-কারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। এর বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ফাইভ-জি চালু করব। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। এবার মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২ দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১ স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এ সংখ্যা ছিল ২২৫। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বাণিজ্য মেলা। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। এবারে মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে মেলার টিকিট কেনা যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো এ মেলা বসেছে পূর্বাচলে। এর আগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হতো। কভিড মহামারির কারণে ২০২১ সালে এক বছর হয়নি। মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য গতবারের মতো এবারও শাটল বাস সার্ভিস রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। প্রয়োজনে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর