সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
নতুন বছরে নতুন চ্যালেঞ্জ

রাজপথ মোকাবিলা, ভোটারদের জয় করতে চায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

রাজপথ মোকাবিলা, ভোটারদের জয় করতে চায় আওয়ামী লীগ

চলতি বছর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে আওয়ামী লীগকে। বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করে ভোটারদের মন জয় করাই এখন টার্গেট। এ ছাড়াও গুরুত্ব দিতে হবে কূটনৈতিক চাপ মোকাবিলা, অপপ্রচার রোধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মাথায় রেখেই এ বছর রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে ক্ষমতাসীন দলটি। 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নতুন বছরে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ দেশ-বিদেশি অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্যটা তুলে ধরা। সরকার টানা ১৪ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে। জনগণের ভালোবাসা নিয়েই ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চারবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতৃত্বে আসতে অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা থাকে। সবাই আসতে পারে না। সে কারণে কোথাও কোথাও নেতা এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। কিন্তু নির্বাচন কিংবা যে কোনো সংকটে আওয়ামী লীগ এক পরিবার, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও তাই হবে।’ আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ রয়েছে সংবিধানে। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছে বিএনপি। তবে উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে সংবিধানের অধীনেই ভোটে যেতে হবে বিএনপিকে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যারা আছে তারা চায় না সামনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক। কারণ, যদি ভোট হয় তাহলে তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নে ভেসে যাবে। তাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই তারা সংবিধান মানে না।’    

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটকে নির্বাচনে আনতে সক্ষম হয় সরকার। নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হয়। এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় ছিল বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন। এ বছর দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যাবে না বিএনপি বললেও শেষ পর্যন্ত অস্তিত্ব রক্ষায় ভোটে আসবে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করবে, করতে পারে। আগামী নির্বাচনে সংবিধান মোতাবেকই আসতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘অতীতে তারা আগুন-সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী তৎপরতা, মানুষ হত্যা করেছে। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা থাকবে আমাদের, আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করা, কূটনৈতিক চাপ সামলানো, দলীয় কোন্দল নিরসন, জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনমত, সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারবিরোধীদের অপপ্রচারের যৌক্তিক জবাব এবং বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব দলকে নির্বাচনমুখী করা। যে কোনো নির্বাচনে জনমত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলীয় নেতা-কর্মীর বাইরেও ভাসমান কিছু ভোটার থাকে। সেই ভোটারের মন জয় করতে হবে। এটাও আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি নির্বাচন শেষ হলে আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক কাজও নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ। এখন থেকে আমরা দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করব। ভোটারদের মন জয় করেই টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর