বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
তীব্র শীতে উত্তাপ রাজপথে

সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে : ফখরুল

বিএনপি ও সমমনাদের গণ অবস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার এখন পুলিশ ও আমলাদের ওপর ভর করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। তবে জনগণ জেগে উঠেছে। জনগণ এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চায়। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় গণ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দেশের ১০টি বিভাগীয় শহরে গতকাল একই সময়ে যুগপৎভাবে এই গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরের কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করাসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ গণ অবস্থান কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী ছিল না। এ কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে জামায়াত গতকাল ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আলোচনা সভাও করে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় নয়াপল্টনের গণ অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী, বিএনপি নেতা আফরোজা খান রিতা, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই গণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপি নেতা হাজী মো. ইউসুফ, আদাবর থানা বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, পল্লবী থানার আলমগীর জাহান মিলনসহ ঢাকা মহানগরের বেশির ভাগ থানা ও ইউনিট নেতাদের নেতৃত্বে খন্ড খন্ড মিছিলে শত শত নেতা-কর্মী নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গণ অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। এই গণ অবস্থান ছিল তাদের দ্বিতীয় যুগপৎ কর্মসূচি। বেলা আড়াইটায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুবার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে এ সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এ সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটি করতে দেওয়া হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। সারা দেশে লুটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এক ঢাকা ওয়াসার এমডির যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি, যার একটির দামই ৫০০ কোটি টাকার বেশি। তিনি শত হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। তারা শত হাজার কোটি পাচার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ৭ ডিসেম্বর এই নয়াপল্টনে মকবুলের লাশ পড়ে ছিল। সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে শত শত কর্মী আহত হন। বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের ছয় শতাধিক কর্মীকে অমানবিকভাবে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগে সফল সমাবেশ হয়েছে। যারা কারাগারে রয়েছেন, তারা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। জনগণ আর পারছে না। ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রসহ জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে সংসদ ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আওয়ামী লীগ পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি অবকাঠামো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ থেকে দেশকে রক্ষা করতে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ জালিমশাহি সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আবারও একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমরা সেটা হতে দেব না। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সভাপতির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলেই সরকার ভয় পায়, আতঙ্কিত হয়। সরকার বলে, বিএনপি বিশৃঙ্খলা করতে চায়। এই গণ অবস্থানের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ভবিষ্যতে কোনো কর্মসূচিতে সরকার বিশৃঙ্খলার অছিলা দেখাতে পারবে না।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘টোকা বা ধাক্কা দিয়ে এই সরকারকে ফেলতে চাই না। সঠিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারের বিদায় ঘটবে। সরকার অযথা আতঙ্কে ভুগছে। কোনো বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি বিএনপি চায় না। আপনারা উসকানি দেবেন না। তাহলে ফল ভালো হবে না। জোর করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ। ১০ দফা মেনে নির্বাচনে আসুন। আপনারা জিতলেও আপত্তি নেই।’

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে ছিল না জামায়াত : সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করাসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ গণ অবস্থান কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী ছিল না। এ কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে জামায়াত গতকাল ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আলোচনা সভাও করে দলটি। তবে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎভাবে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে জামায়াত। সেদিন রাজধানীর পল্টন, মালিবাগসহ কয়েকটি এলাকায় জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এরপর গতকাল বিএনপির গণ অবস্থান কর্মসূচির দিন প্রকাশ্য রাজপথে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করল জামায়াত। জামায়াতের গণমিছিলে প্রতিবন্ধকতার প্রতিবাদ ও দলের আমিরসহ গ্রেফতার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি : গণ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবির পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। জনগণ আর পারছে না। ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রসহ জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চ : সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এতে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এরপর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ।

১২-দলীয় জোট : আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর, জেলা-উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন ১২-দলীয় জোট। গতকাল রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকি সংলগ্ন রাস্তায় গণ অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে জোটের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপি মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির চেয়ারম্যান কারি মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট : রাজধানীর বিজয়নগরে গতকাল যুগপৎ গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এতে বক্তব্য রাখেন ১১-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এস এম শাহাদাত, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা প্রমুখ।

এলডিপি : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) এফসিডি-সংলগ্ন নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে গতকাল গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ। তিনি সরকারের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারার প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দেশের প্রতিটি উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

নাগরিক মঞ্চ : নাগরিক মঞ্চের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, আলেম-ওলামাসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ ১১ দফা দাবিতে গণ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। বক্তব্য রাখেন আহসান উল্লাহ শামীম, আমছাআ আমিন, মো. মাসুদ হোসেন প্রমুখ।

গণফোরাম : বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুগপৎ আন্দোলনের গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে গণফোরাম। সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম সভাপতি জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টু। বক্তব্য রাখেন সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, বীর মুক্তিযোদ্ধা খান সিদ্দিকুর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী প্রমুখ।

ইউট্যাবের সংহতি প্রকাশ : অবিলম্বে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে রাজধানীতে বিএনপির গণ অবস্থানে সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের নেতৃত্বে নয়াপল্টনে হোটেল ভিক্টোরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিএনপি আয়োজিত গণ অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন ইউট্যাবের নেতারা। এ ছাড়া সারা দেশে যুগপৎ গণ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : বর্তমান সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজাতে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে বিএনপির গণ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন, গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, মাহবুবের রহমান শামীম, ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

সিলেট : অতীত কর্মকান্ডের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছেড়ে মাফ চেয়ে জনতার কাতারে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সরকার ফ্যাসিবাদের যত উপকরণ আছে সব জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় ১০ দফা দাবি আদায়ই হচ্ছে দেশের মানুষের মুক্তির একমাত্র উপায়। তাই গণতন্ত্র উদ্ধার ও মানুষকে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি দিতে বিএনপি জনগণকে নিয়ে মাঠে নেমেছে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই দেশ ও মানুষকে মুক্ত করা হবে। গতকাল কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভাগীয় গণ অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, আরিফুল হক চৌধুরী, জি কে গৌছ, কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, এম নাসের রহমান, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। গণ অবস্থান কর্মসূচিতে বিভাগের চার জেলার হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।

রাজশাহী : বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসনে পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি গতকাল কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী ভুবনমোহন পার্কে গণ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মঞ্চ ভেঙে পড়েছে। তাদের সময় হয়ে গেছে বিদায় নেওয়ার। এভাবে সরকার ভেঙে পড়বে। বিএনপির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা, রাজশাহী জেলা ও মহানগর নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। আওয়ামী লীগ দেশটাকে লুটেরা রাজ্যে পরিণত করেছে, সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ এই সরকার। আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে জনগণের অবস্থা দুর্বিষহ করে তুলেছে।’ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল নগরীর টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে আসা বিভিন্ন ইউনিটের হাজারো নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আবদুল গফুর ভূঁইয়া, সায়েদুল হক সাইদ, এম এ মালেক, রাশেদা বেগম হীরা, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, লায়ন হারুন অর রশিদ, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আহমেদ, জসিম উদ্দিন, আমিরুজ্জামান আমির, উৎবাতুল বারী আবু, ইউসুফ মোল্লা টিপু, আক্তারুজ্জামান মুন্সী, আতাউর রহমান ছুটিসহ কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

খুলনা : সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি হিসেবে খুলনায় বিভাগীয় গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে খুলনা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। আগত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে কে ডি ঘোষ রোড, স্যার ইকবাল রোড, ক্লে রোড, হেলাতলা রোড, স্টেশন রোড লোকে লোকারণ্য হওয়ায় দুপুরের পর থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মেহেদী আহমেদ রুমি, শফিকুল আলম মনা, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মাহমুদ হাসান খান বাবু, ওবায়দুর রহমান, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুজ্জামান শিমুল প্রমুখ।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ নগরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পাশে হরিকিশোর রায় রোডে গণ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম, ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, জাকির হোসেন বাবলু, ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু, আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ স্থানীয় নেতারা। এর আগে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগদান করেন।

সর্বশেষ খবর