শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রস্তুত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বদলে যাবে ঢাকার যোগাযোগ

বিমানবন্দর-বনানী ৯৩ শতাংশ, বনানী-মগবাজার ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ, অচিরেই পাইলিং তৃতীয় ফেজে, আশুলিয়া থেকে বিমানবন্দরেও হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে

হাসান ইমন

বদলে যাবে ঢাকার যোগাযোগ

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর-যাত্রাবাড়ী ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর-বনানী প্রথম ফেজের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাকি এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আর আশুলিয়া-বিমানবন্দর ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে। এ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ হলে উড়ালপথে সাভার থেকে যাত্রাবাড়ী ৪৪ কিলোমিটার পথ সংযুক্ত হবে। এ পথ পাড়ি দিতে লাগবে ১ ঘণ্টার কম। রাজধানী ঢাকার যানজট এড়িয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের সব ধরনের যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারবে। এতে দেশের উত্তর-দক্ষিণের ৩০ জেলার               যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। একই সঙ্গে চাপ কমবে ঢাকার ওপর। প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ২০ কিলোমিটার সড়কটি তিনটি ফেজে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয়াংশ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত। তৃতীয়াংশ মগবাজার থেকে যাত্রাবাড়ী পেরিয়ে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে প্রকল্পের কাজ। এটি চালু হলে বিমানবন্দর থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেতে ১৫-২০ মিনিট লাগবে। এ ছাড়া আশুলিয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ গত বছরের নভেম্বরে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আশুলিয়া থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেতে ১ ঘণ্টার কম লাগবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানান, উড়ালসড়ক বাস্তবায়নের পর ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আশুলিয়া-বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। উড়ালসড়ক শুধু বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী রুটের যাত্রীদেরই স্বস্তি দেবে না, একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এতে ঢাকা ও এর পাশের অংশে যানজটের নিরসন হবে। এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে দেশের ৩০ জেলার মানুষ দ্রুত ও সহজে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতে পারবে। এর মাধ্যমে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ০ দশমিক ২১ শতাংশ বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি ফেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর-বনানী এক্সপ্রেসওয়ের ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ। দ্বিতীয় ফেজের বনানী-মগবাজার ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ। আর তৃতীয় ফেজের মগবাজার-চিটাগাং রোড পাইলিংয়ের কাজ কিছু দিনের মধ্যে শুরু হবে। সব মিলিয়ে কাজের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। এ এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যাতায়াতে ১৫-২০ মিনিট লাগবে। একই সঙ্গে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে। আর আশুলিয়া-বিমানবন্দর এক্সপ্রেসওয়ের ২৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক এগিয়ে যাবে। সহজে রাজধানীকে বাইপাস করে পরিবহন যাতায়াত করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রেললাইনের ওপর কাজ করা খুবই কঠিন। দিনে সব সময় ট্রেন চলে, সেজন্য দিনে ওপরের কাজ করা হয় না। অভ্যন্তরীণ কাজ করা হয়। রাতে ট্রেনের সংখ্যা কম থাকে, সেজন্য রাতে কাজ করা হয়। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ২৪ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিমানবন্দরের অংশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার জায়গাটির কার্পেটিং ও দুই পাশের ব্যারিয়ারের কাজ বাকি রয়েছে। যদিও মাটি ও ইট ফেলে আপাতত সচল রাখা হয়েছে। একটু ওপরে উঠতেই দেখা মিলল টোল প্লাজা। টোল প্লাজার কাজ সম্পূর্ণ শেষ। বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত মূল সড়কের কাজও শেষ। এখন এক্সপ্রেসওয়ের ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এরপর শুরু হবে কার্পেটিংয়ের কাজ। আর কার্পেটিংয়ের কাজের জন্য ওপরের মূল সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। আলোর জন্য ইতোমধ্যে আটটি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। বাকিগুলো বসাতে পুরোদমে কাজ চলছে। তবে মাঝে মাঝে লিঙ্ক স্লাব বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। একই সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ লাগানোর কাজ বাকি রয়েছে। চলছে দিকনির্দেশনাসংবলিত সাইনবোর্ডের কাজ। বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সাইট ব্যারিয়ার ও মিডেলিং ব্যারিয়ারের কাজ প্রায় শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। বর্তমানে দুই শিফটে ফিনিশিং, লাইটিং, কার্পেটিংসহ এক্সপ্রেসওয়ে প্রস্তুতে সব ধরনের কাজ চলছে।

জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির বিদ্যমান অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ার কারণে প্রথম সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পে সংশোধন এনে সময় ও ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-বনানী-তেজগাঁও-মগবাজার-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়ালসড়কে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। আর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে ২০১৭ সালে অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। যদিও কাজ শুরুর আগেই শেষ হয়েছে মেয়াদ। তাই প্রকল্পটি সংশোধন করে আরও চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুনে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সঙ্গে নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে এর নির্মাণ ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর