রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুর্নীতির তথ্য দিন, ব্যবস্থা নেব : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির তথ্য দিন, ব্যবস্থা নেব : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির কথা শুধু মুখে মুখে বললে হবে না। কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমাকে তথ্য দিন। আমি তো পার্লামেন্টে বলেছি, আমি ব্যবস্থা নেব।

গতকাল দুপুরে গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভার মুলতবি বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ যৌথ সভা হয়। পরে তা মুলতবি করা হয়।

সভায় প্রায় ২০ জন নেতা বক্তৃতা করেন। তারা বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা আর আন্দোলন করার সুযোগ না দেওয়ার ব্যাপারে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তৃতা শোনেন।   

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন এমন এমন লোকজনের কাছ থেকে আমাকে দুর্নীতির কথা শুনতে হচ্ছে যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। যাদের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অথবা কেউ বলতে গেলে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করতে গিয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ দিয়েছে যে, সুদ দিতে দিতে তাদের অনেক সময় বাড়িঘর ছেড়ে এলাকা থেকে চলে যেতে হয়েছে। অথবা আত্মহত্যা করতে হয়েছে। তারাই দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছেন।

কারও নাম উল্লেখ না করে সরকারপ্রধান বলেন, এই গরিব মানুষের টাকা দিয়েই কিন্তু দেশে নাম-টাম করে বেশ ভালোই আছে এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করে ফেলেছেন। এই টাকাগুলো কোথা থেকে, এগুলো গরিবের রক্তচোষা টাকা। এটা তো বাস্তব কথা। ক্ষুদ্রঋণের বোঝা থেকে মানুষকে মুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের ক্ষুদ্র সঞ্চয় সৃষ্টিতে ট্রেনিং, টাকা এবং সমবায় গড়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ জন্য ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প’ যেমন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, তেমনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকারের দুই বছরের সহযোগিতায় এক সময় বিনিয়োগকারী ব্যক্তির হাতে মূলধন হবে, সে সময় প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও সে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা দিয়ে তাঁর ক্ষুদ্র ব্যবসা চালাতে পারবে। অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণে যে উচ্চহারে সুদের বোঝা টানতে হয় সে সুদের বোঝা টানা থেকে তাদের মুক্ত করে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে নিয়ে গিয়ে তারা যেন তাদের নিজের পায়ে দাঁড়োতে পারে সরকার সে ব্যবস্থাটাই করেছে। পাশাপাশি যুব সমাজের জন্য সরকার কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছে, যেখান থেকে বিনা জামানতে তারা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিদেশগামীদের জন্য সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকও করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এভাবেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডগুলো পরিচালনার ফলে আজকে বাংলাদেশে বিরাজমান দারিদ্র্য ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামাতে সক্ষম হয়েছে এবং হতদরিদ্র ২৫-৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং মাথাপিছু আয়ও বাড়াতে পেরেছে। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে যে কথা দেয় সে কথা রাখে। যে ওয়াদা জাতিকে দিই সেটা আমরা রক্ষা করি। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সব সময় জাতির কল্যাণে কাজ করে এবং দেশের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে। প্রতিবারই তাঁরা জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করেছেন। প্রতিটি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের যে অঙ্গীকার করে এবং আওয়ামী লীগ সব সময় তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে, এটাই হলো বাস্তবতা।

বিগত সময়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বর্ণনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যা যা চেয়েছিলেন আমরা সেগুলো কিন্তু একে একে করে দিচ্ছি মানুষকে। তাঁর যে স্বপ্নটা, সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য। এত কাজ করার পরও কিছু লোক আছে তাদের কোনো কিছু ভালো লাগে না। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন মাথা তুলে চলতে পারে। তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন ঘটেছে, আমি জানি এটা অনেকেই নিতে পারে না। নানা ধরনের কথা রটায়। কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে, এ ছাড়া রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আমরা করেছি। এটাকেও অনেকেই স্বীকার করতে চায় না। করতে চাইবেও না।

সরকারপ্রধান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা একেবারে নির্দিষ্ট বেতনে চলতে হয় তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। সেই জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে খাবার কিনে নিয়ে আসতেছি। ভর্তুকি মূল্যে সেটা দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমি জানি না বাংলাদেশে আর কোনো সরকার এভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে কি না।

দেশে বেকার থাকার সুযোগ নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ ইচ্ছা করলে বেকার থাকতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে কিন্তু এখন গ্রামে বসে টাকা উপার্জন করছে। কাজেই এভাবে যত সুযোগ আছে আমরা করে দিয়েছি। অনাবাদি জমিতে আবাদ করার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আমার এলাকায় (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) খুঁজে দেখলাম প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমি আছে অনাবাদি। আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অনাবাদি জমিতে আবাদ করার একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বাইরেও অনেক জমি রয়ে গেছে। আমি উদ্যোগ নিয়েছি আমার ওখানে যত অনাবাদি জমি রয়েছে সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আবাদ করা। সেখানে শ্রমিকের পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে। এভাবে সবাই শুরু করলে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের অভাব হবে না। উৎপাদন করে বাইরেও রপ্তানি করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের তরিতরকারি এখন ৭০টির মতো দেশে রপ্তানি হচ্ছে। শরীয়তপুরে যে সবজি হচ্ছে তা সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমরা করতে পারি। কাজেই সেভাবেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চিন্তা আমাদের করতে হবে। কৃষকদের গুরুত্ব দিয়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বানের পাশাপাশি ‘ভূমি সংহতি সাধনে উদ্বুদ্ধ করার’ এবং ‘প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক তৎপরতা চালানোর’ কথা জাতির পিতা বলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর গবেষণায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকে গবেষণায় পৃথক বরাদ্দ দিয়েছি। যার জন্য বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

সর্বশেষ খবর